সন্তানের পিতৃপরিচয় ও স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে আদালতে মামলা

স্থায়ীভাবে আপ্রান চেষ্টার পর অবশেষে এক অসহায় মা দেড় মাস বয়সী পুত্র শিশুটির পিতৃপরিচয় প্রতিষ্ঠায় শেষ পর্যন্ত আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন। বিয়ের ফাঁদে পড়ে অসহায় ওই নারী যখন পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন তখন স্বামী নামধারী ব্যক্তি শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেও বিয়ের কথা অস্বীকার করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের শাহপুর-রামপুর গ্রামে। ভুয়া কাগজে স্বাক্ষর করে মিথ্যা বিয়ের নাটক সাজিয়ে ওই গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুল হান্নানের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করে একই গ্রামের মৃত মজিদ সরদারের ছেলে আব্দুল আহাদ সরদার।

এ ঘটনায় যশোরের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী, মণিরামপুর) আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি ফাতেমা খাতুন। ফাতেমা খাতুনকে বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ভুয়া বিয়ে করে শারীরিক সম্পর্কের পর সে অন্ত:সত্বা হয়ে পড়লে স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি পেতে স্বামী নামধারী আহাদ সরদারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নালিশী অভিযোগ দায়ের করেছে ফাতেমা নিজেই।

আরও পড়ুন:
মিরসরাইয়ে চলছে নিরাপদে থাকার মাইকিং
পাঁচবিবিতে মেয়র কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন

অভিযোগের বিবরণে জানা গেছে- ফাতেমা খাতুনের দূরসম্পর্কের আত্মীয়তার সুবাদে আহাদ সরদার প্রায় ফাতেমার বাড়ীতে আসতো। ফাতেমার পিতার সংসারে অভাব-অনাটনের সুযোগের একপর্যায়ে বিভিন্ন ভাবে আকৃষ্ট করতে আহাদ সরদার ভালবাসার প্রস্তাব দেয় ফাতেমাকে। এমনকি বিভিন্ন সময় শাড়ী কাপড়, প্রসাধনী সামগ্রীসহ নগদ অর্থ প্রদান করে। একসময় আহাদের প্রতি মন দূর্বল হয়ে পড়ে ফাতেমার। সেই সুযোগে ফাতেমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় আহাদ। ফাতেমার মায়ের অনুপস্থিতিতে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় ফাতেমার পিতার বাড়ীতে এসে আহাদ তাকে (ফাতেমা) বিয়ে করার কথা বলে। সেসময় একটি অলিখিত নীল কাগজে টিপসই নিয়ে কালেমা পাঠ করিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয় ফাতেমাকে। ওই রাত থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী রূপে সম্পর্ক স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ফাতেমার মা তার আরেক মেয়ের বাড়ীতে অবস্থান করায় বাড়ি একপ্রকার ফাঁকাই থাকতো।

পরবর্তীতে ফাতেমা অসুস্থ্য হলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে আল্ট্রাসনো করানো হয়। তাতে ফাতেমা ৫মাসের অন্ত:সত্বা ধরা পড়ে। এ সংবাদ শুনে ফাতেমার পিতা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লে সে তার পিতাকে সবকিছু জানায়। ফাতেমার পিতা স্থানীয় লোকজন সাথে নিয়ে আহাদের বাড়ীতে যেয়ে উল্লেখিত ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান।
সেসময় আহাদ শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেও বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। তিনি ফাতেমার সাথে মিথ্যা বিয়ের অভিনয় করে নীল কাগজে টিপসই নেয়া হয়েছে বলে জানান।

দিন যায়, মাস যায়। ফাতেমার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হয়। সেই পুত্র সন্তানের বয়স এখন দেড় মাস। সন্তান প্রসবের আগে-পড়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে আপ্রাণ চেষ্টার পরেও স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করে আসছেন প্রতারক আব্দুল আহাদ। আর সন্তানের পিতৃপরিচয় ও নিজের স্ত্রীর মর্যাদার লড়াইয়ে ফাতেমা খাতুন ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে।

এমন ঘটনায় বিচার চেয়ে আহাদ সরদারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী, মণিরামপুর) আদালত, যশোরে ৪৯৩ দঃ বিঃ ধারায় নালিশী অভিযোগ দায়ের করেছেন আহাদ সরদার কর্তৃক প্রতারণার শিকার অসহায় ফাতেমা খাতুন।

নভেম্বর ৯, ২০১৯ at ১৮:৪২:৩০ (GMT+ 06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/বিএইচ/এআই