ভালোবাসা শুধুই কি ভালোবাসা?

ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না।

অনেকেই ভালোবাসার মত একটি সর্বজনীন ধারণাকে আবেগপ্রবণ ভালোবাসা, কল্পনাপ্রবণ ভালোবাসা কিংবা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ভালোবাসা এসব ভাগে ভাগ করে থাকেন আসলে এভাবে পক্ষপাতী হয়ে ভালোবাসার কথা বলা যায়না সহজেই।তবে অনেক ক্ষেত্রে ভালোবাসাকে শারীরিক আকর্ষণের ওপর ভিত্তি করেও শ্রেণীবিন্যাস করা যেতে পারে।

সাধারণত আমার মতে, ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যেটা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে থাকেন। এছাড়াও কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতিক্ষেত্রে কারো উপস্থিতি অনুভব করাও ভালোবাসার সাথেই সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা এভাবেই হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:
মাদকের সাথে জড়িতদের দেওয়া যাবে না নেতৃত্বে
অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২৬ লাখ টাকা ছিনতাই

যেমন:-নিঃস্বার্থতা,স্বার্থপরতা,বন্ধুত্ব,মিলন,পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত থাকাকেই ভালোবাসা বলা হয়ে থাকে।

অন‍্যভাবেও বলা যেতে পারে ভালোবাসার কথাকে “সুখ কে কেন্দ্র করে দুখকে সঙ্গে নিয়ে যে বৃত্ত মনের মধ্যে আকা হয়ে থাকে” তাকেও ভালবাসা বলা যেতে পারে।

প্রেম-ভালোবাসার জন্ম তখনই হয়ে থাকে যখনই একজন মানুষের সাথে অন্য একজন মানুষের মধ্যে দেখা হয়, কথা হয় ও চোখের ভাল লাগা হয়ে থাকে, এছাড়াও রাগ-অনুরাগ থেকেও প্রেম-ভালোবাসার জন্ম হয়, অনেক সময় ঘৃণা থেকে প্রেম-ভালোবাসা দেখা দেয় অনেকের জীবনে, প্রেম-ভালোবাসার জন্ম হয়ে থাকে অপমান থেকেও, এমনকি প্রেম-ভালোবাসা অতিরিক্ত লজ্জা থেকেও হয়ে থাকে। প্রেম-ভালোবাসা আসলে লুকিয়ে আছে মানবসম্প্রদায়ের প্রতিটি ক্রোমসমে।একটু সুযোগ পেলেই সেই প্রেম-ভালোবাসা জেগে উঠে‌।

তবে এই প্রেম-ভালোবাসার আনন্দ অনেক সময় হারিয়ে গিয়ে কঠিন ভাবে আসে অনেকের জীবনে যেনো বেদনার কালরূপ নিয়ে ধরা দিয়ে আসে ফিরে । তাই বলতে হয় সারাটি জীবন প্রেম-ভালোবাসা ধরে রাখতে পারেনা কেউ, একসময় আসে যখন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় প্রেম-ভালোবাসার স্বন্ধি।তখন হয়তোবা পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা অনেক কঠিন হয়ে যায় কেননা প্রিয় মানুষগুলোকে ছেড়ে বেঁচে থাকাটা আসলেই অনেক কষ্টকর হয়ে থাকে কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়, জীবন এমনই যা কখনোই থেমে থাকেনা কারো জন্য জীবন তার মতই প্রবাহিত হয়ে থাকে শতভাগ কষ্টের মোকাবেলা সয‍্য করে।

একথা আমাদের সকলকে স্বিকার করতে হবে যে প্রেম-ভালোবাসা মানুষকে একটু বেশিই শান্তি দেয়‌ ও স্বস্তি দেয় শত কষ্টের পড়েও এই প্রেম-ভালোবাসা ভালো লাগে জীবনের প্রতিটি ক্ষণে খুবই কম কষ্ট সইতে হয়ে থাকে জীবন সাজাতে। তারপরেও কষ্টের ভার অনেকেই সইতে পারেন না।তখন জীবনকে একঘেয়ে লাগে। কিছুই ভালো লাগেনা শুধুমাত্র হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার কথাকে মনে করেই জীবনকে সহজেই মেনে নিয়ে চলতে হয়ে থাকে নতুন করে নতুন ভাবে নতুনের খোঁজে।

আমরা অনেক সময় এককক ভাবেই মনের মানুষের প্রতি ভালোবাসা সবটুকুই উজাড় করে দিয়ে থাকি, এভাবে কাউকে প্রচন্ডভাবে এবং এককভাবে ভালবাসতে গেলে এক ধরনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে থাকে নিজের মাঝে।আর তখনই নিজেকে অনেক তুচ্ছ এবং সামান্য একজন মানুষ বলে মনে হয় এই বাস্তবতার পৃথিবীতে,হয়তোবা তখন সমাজের কাছে এবং ভালোবাসার মানুষের কাছেও অনেক ছোট হতে হয়। জীবন তখনই যেনো হতাশায় ছেঁয়ে যায় ধীরে ধীরে।ব্যাপারটা তখন ভীষণ ভাবে নিজেকে ছোট করে দেয়।তবে আমরা অনেকেই অনেক সময় ভূলে যেয়ে থাকি যে বিষয়টি আমরা প্রেমে পড়ে গিয়ে অনেকেই যেনো ভালো থেকেও বোকা হয়ে যাই, আবার অনেকে আছেন বোকা থেকেও তারা যেনো প্রেমে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিমান হয়ে যায়।

প্রেম-ভালোবাসার মধ্যে ভয় জিনিস খুবই কম লোকের মধ্যে দেখা দেয়, তখন শুধুমাত্র একে অপরের প্রতি ভালোবাসার নানান ধরনের রঙ্গ রসের কথাই নিবিড় ভাবে প্রকাশ পেয়ে যায় । এছাড়াও আমাদের মধ্যে অনেক সময় বন্ধুত্বকে ঘিরেও একে অপরের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার জন্ম নিয়ে থাকে, একে অন‍্যের প্রতি তখন বন্ধুত্ব ভুলে গিয়ে ভালোবাসার অশ্বদার হিসেবে জড়িয়ে পড়েন। তখন তারা বন্ধুত্ব ভুলে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পডে যায় গভীর ভাবে। হয়ত খুবই অল্প জনের মধ্যেই এই রূপ দেখা যায়।আমাদের সকলকেই একটি কথা সহজেই মেনে নিতে হবে।

প্রেম-ভালোবাসা অবশ্যই স্বর্গীয় দান, আর এখানে বয়সের তেমন মাপকাঠি থাকেনা যে কোনো বয়সে যে কেউ প্রেমের মধ্যে পা ফেলতে পারেন।সব জীবের মধ্যেই প্রেম-ভালোবাসা আছে এবং একসময় ধরা দিয়ে থাকে এটাই স্বাভাবিক। যুগযুগ থাকবে প্রূম-ভালোবাসা এটাই চিরসত‍্য এবং বাস্তব কথা, তবে শেষ কথা হলো প্রেম-ভালোবাসার সঠিক কোনো সংজ্ঞা বা বিশ্নেষন নেই সকল প্রাণী এক সময় প্রেমে পড়বেই এবং পড়তে হবেই।

সত্য করে বলতে গেলে ভালবাসার কোন সংজ্ঞা নাই জীবন চালনায়, আমাদের সমাজের মধ্যে বসবাস করতে গেলে একে অপরের মধ্যে যে সম্পর্কের মূল শিকর তৈরি হয়ে থাকে তাকেই ভালোবাসা বলা হয় যেমন:-সুখ, দুক্ষ, হাসি, কান্না ইত্যাদি নিয়েই ভালবাসার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই ভালোবাসা মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতি এমনকি এই পৃথিবী সৃষ্টির লগ্নে একে অপরের মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। তাই বলা হয়ে থাকে ভালোবাসার জন্ম হয়েছে স্বর্গ থেকে আবার ভালোবাসা চলে যায় স্বর্গে।

ভালোবাসার কথাকে সাধারণত এবং বিপরীত ধারণারমধ্যে তুলনা করে অনেকেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসাকে জটিলভাবে বিচার বিবেচনা করে থাকেন। ধনাত্মক অনুভূতির কথা বিবেচনা করে ভালোবাসাকে ঘৃণার বিপরীতে স্থান দেওয়া যেতে পারে।এছাড়া ভালোবাসায় যৌনকামনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা অপেক্ষাকৃত একটি গৌণ বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশি গুরুত্ব বহন করে থাকে অনেক সময়।কল্পনাবিলাসিতার একটি বিশেষ ক্ষেত্র হচ্ছে এই ভালোবাসা। ভালোবাসা শুধুমাত্র বন্ধুত্বকে বুঝায় না, যদিও কিছু সম্পর্ককে অন্তরঙ্গ করেই বন্ধুত্বের সম্পর্কে বহাল রাখতেও ভালোবাসার কথাকে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

নভেম্বর ১, ২০১৯ at ১০:০৫:৩০ (GMT+ 06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/দেপ্র/এআই