সমালোচনার ঝড়, আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষনা পদে বঞ্চিত অনেক নেতা

গত ৩০ অক্টোবর ২০১৯ যশোরের চৌগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে।স্যেসাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ৭১ সদস্য বিশিষ্ঠ এই কমিটি প্রকাশ পেয়েছে। কমিটি ঘোষনা হওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে সমালোচনার ঝড়। কমিটিতে যেমন তরুনরা স্থান করে নিয়েছে, তেমনি ভাবে ত্যাগী দলের কান্ডারী হিসেবে পরিচিত অনেক বাঘা নেতা গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এমনকি অনেকে বাদও পড়েছেন। ঘোষিত এই কমিটির ভবিষ্যাত কি হবে তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে এসএম হাবিবুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী মাসুদকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়। সেই আংশিক কমিটি প্রায় দুই বছর দল পরিচালনা করে আসছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে এমন আলোচনা বেশ কিছু দিন ধরেই চলে আসছিল।

একপর্যায় গত ৩০ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিভিন্ন স্যোসাল মিডিয়া ও সংবাদ পত্রে প্রকাশ পেয়েছে। ঘোষিত কমিটি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে চরম ক্ষোভ আর হতাশা। অনেক নেতা দল ছাড়ারও হুসিয়ারী দিয়েছেন। ঘোষিত কমিটিতে দেখা গেছে সভাপতি-সম্পাদক যথাক্রমে এসএম হাবিবুর রহমান ও মেহেদী মাসুদ চৌধুরীকে রাখা হয়েছে। সহ-সভাপতি করা হয়েছে পাতিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম মিয়া, পাঁচনামনা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম রাজ প্রমুখ। অনুরুপ ভাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে এসএম সাইফুর রহমান বাবুল, তারিকুল ইসলাম, তবিবুর রহমান খাঁন প্রমুখকে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই পদ থেকে অনেকেই বাদ পড়ে হয়েছেন ৭১ সদস্যের একজন সাধারণ সদস্য।

এ ছাড়া ঘোষিত কমিটির মধ্যে বর্তমান ছাত্রলীগের কমিটি থেকেও অনেকে স্থান করে নিয়েছেন। ঘোষিত কমিটির সদস্য হয়েছেন এসএম হাবিবুর রহমানের ছেলে এসএম রেজওয়ান হাবিব আলিফ। একই পরিবারের তিনজন কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত নিয়েও চলছে সমালোচনা। দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, ঘোষিত কমিটিতে তরুনদের মধ্যে স্থান পেয়েছে বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, ছাত্রলীগ নেতা হুমায়ুন কবির সোহেল, অমিত কুমার বসু, শফিক হায়দার লাভলু, যুবলীগের মামুন কবির, আসাদ চৌধুরী, মাহবুব আলম রিংকু, শামীম আক্তার, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। তরুনদের যেমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে তেমনি ত্যাগী অনেক নেতাদের করা হয়েছে সদস্য।

আরো পড়ুন :
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালেই ৬ মাসের কারাদণ্ড
সুবোধমিত্র অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন

জগদীশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান কবির, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড.এম মোস্তানিছুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশিষ মিশ্র জয়, পৌর মেয়র নুর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, ফুলসারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাহিদুর রহমান বকুলসহ অনেক বাঘা নেতাকে সদস্য করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে পকেট কমিটি করার কারনে দলটির অনেক বাঘা নেতাকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন, কেন্দ্রী কমিটির নেতা মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের সভাপতি আহসানুল হক আহসান, জেলা পরিষদের সদস্য দেওয়ান তৌহিদুর রহমান, সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান শান্তি মৃধা, নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মুকুল, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিদায়ী যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলার আব্দুল মুজিদ প্রমুখ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতার সাথে কখা বলে জানা গেছে, ঘোষিত কমিটি একটি পকেট কমিটিতে রুপ নিয়েছে। তা না হলে এসএম হাবিব সভাপতি, তার ভাইপো এসএম বাবুল ১নং যুগ্ম সম্পাদক এবং এসএম হাবিবের ছেলে আলিফ কিভাবে সদস্য হয়। ঘোষিত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদে বিতর্কিতদের রাখা হয়েছে বলেও তারা দাবি করেন। ঘোষিত কমিটি দলের জন্য কতটুকু উপকারে আসে সেটিই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বর্তমান কমিটির পদ বঞ্চিত সদস্য ও সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, উপজেলা কমিটিতে ৩ বার দায়িত্ব পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। দলকে সুসংগঠিত করতে রাতদিন পরিশ্রম করেছি। তারপরও দলের ত্যাগীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি ঘোষিত কমিটি মানিনা। এই কমিটি দলের থেকে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ত্যাগীদের নিয়ে তামাশা করা হয়েছে।

এই কমিটি আমি প্রত্যাখ্যান করছি। ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে রাজনীতি করতে এসেছি। তৃর্ণমূল পর্যায় দলকে সুসংগঠিত করে দলের প্রসার ঘটানোর কাজে ভূমিকা পালন করেছি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলের দূর্দিনে ও ক্লিনহার্ট অপারেশনে নির্যাতন সহ্য করে দলকে আগলে রেখে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাজপথে থেকেছি। তারপরও যে কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে সেখানে আমাকে রাখা হয়নি।

তবে কমিটি গঠন করার আগে আরো চিন্তাভাবনা ও দায়িত্বশীলভাবে গঠন করা দরকার ছিল বলে আমি মনে করি। বর্তমান কমিটির সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,কমিটির বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনে। অপর এক সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান কবির বলেন, কমিটি হয়েছে শুনেছি। তবে আগামীতে দল চালানোর মত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাদ পড়েছে। কমিটিতে পদের সমন্বয় ভালো হয়নি।

৩১, অক্টোবর,  ২০১৯  at ২১:১১:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/মই/এজে