এক প্রেমিকের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারালেন ২০ নারী

প্রকৃত নাম আশরাফুল মোল্যা (৩৮)। সুমন আর্মি, সুমন হাসান, সুমন মোল্যা নামেও তিনি পরিচিত। নিজেকে সরকারি চাকরিজীবী পরিচয় দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের নামে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ব্লাকমেইল করাই তার পেশা।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত তার ২০ জন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। একই সঙ্গে এ সবের ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে ওই নারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে।

এমন এক ঘটনায় যশোরের বাঘারপাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অজ্ঞাত আসামির নামে মামলা হয়। একটি মোবাইল ফোনের নম্বরের সূত্র ধরেই ‘পেশাদার’ প্রেমিক আশরাফুল মোল্লাকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। গ্রেফতারকৃত আশরাফুল মোল্লা নড়াইল সদর উপজেলার বোড়ামারা গ্রামের আকবর মোল্লার ছেলে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বাঘারপাড়া থানার একটি ধর্ষণ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আশরাফুল মোল্লাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীর সদস্য ও সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে প্রতারণা করছিল। মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের নামে প্রতারণার মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত। এরপর সেই ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমের কাছে টাকা দাবি করত।

এক ছাত্রীকে একই কায়দায় ধর্ষণের পর টাকা দাবি করেছিল। গত ৩ অক্টোবর বাঘারপাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ঝিকরগাছার এক ব্যক্তি। তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাঘারপাড়া থানার জামদিয়া এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করা হয় এজাহারে।

আরো পড়ুন:
আওয়ামী রাজনীতিতে মাদকাসক্তের কোন স্থান নেই -মোশাররফ হোসেন
মাদ্রাসার শিক্ষকের উপর হামলা, বিচার দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তবে অভিযুক্তের নাম-পরিচয় সেখানে উল্লেখ করেননি। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি পুলিশ ভিকটিমের কাছ থেকে ওই যুবকের একটি মোবাইল ফোন নম্বর পান। সেই মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই আশরাফুল মোল্লাকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।

সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যশোর শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ভুয়া আইডি কার্ড, তিনটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, সেনাবাহিনীর একটি করে ক্যাপ, নেমপ্লেটযুক্ত জ্যাকেট, সোয়েটার, ১৩টি সিম কার্ড, ধর্ষণের ভিডিও ধারণকৃত একটি মেমোরিকার্ড ও দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪টি মামলা রয়েছে।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আশরাফুল পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, ২০১১ সাল থেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করত। সেই ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল করে টাকা আদায় করত।

এই পর্যন্ত ২০ জন মেয়েকে একইভাবে ধর্ষণ করেছে। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় প্রতারণার মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মারুফ আহমেদ।

অক্টোবর ৩০, ২০১৯ at ০০:৪৭:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/যু/এএএম