ফেলে গেলেন মা, কোলে নিলেন ডিসি

পঞ্চগড়ে এক মাস বয়সী হতভাগ্য এক কন্যাশিশুকে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে গেল তার মা। গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে জেলা শহরের কামাতপাড়া মহল্লার একটি গলি থেকে উদ্ধার করে ফুটফুটে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে পুলিশ। শিশুটি বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান। এ সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাবিনা ইয়াসমিন শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ শিশুটিকে কোলে রাখেন। এদিকে অনেকেই শিশুটিকে শিশুটিকে দত্তক নিতে ভিড় করেন হাসপাতালে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পঞ্চগড় উপজেলা সদরের অমরখানার ভিতরগর এলাকার গৃহবধূ রিমু আক্তার দুই বছর আগে পরকীয়ার জের ধরে দিনাজপুরের পার্বতীপুর এলাকার এক ট্রাকচালকের হাত ধরে উধাও হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূ তার নানাবাড়ি জেলা শহরের কামাতপাড়া এলাকায় এসে পেয়ারা বেগম নামে আরেক গৃহবধূকে তার এক মাস বয়সী কন্যাশিশুটিকে দত্তক নিতে বলে। এতে পেয়ারা বেগম অস্বীকৃতি জানালে পেয়ার বেগমের প্রতিবেশী অশোক চন্দ্র মোদকের বাড়ির একটি গলিতে শিশুটিকে রেখে পালিয়ে যায় মা রিমু আক্তার। রাতে পরিত্যক্ত অবস্থায় শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন।

রাতেই জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান। পরে তারা কামাতপাড়া মহল্লার পেয়ারা বেগমসহ শিশুটির নানাবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং শিশুটির মায়ের খোঁজ করেন। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত শিশুটির মায়ের কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ। এদিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় শিশু উদ্ধারের খবরে অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে ভিড় করেন হাসপাতালে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সিরাজউদ্দোলা পলিন বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালের বিশেষ শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। শিশুটি শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে। একজন প্রসূতি মাকে দিয়ে শিশুটির খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিশুটির মা রিমু আক্তারের মামা মো. মুক্তা বলেন, প্রায় দুই বছর আগে স্বামী-সংসার রেখে দিনাজপুরের পার্বতীপুর এলাকার এক ট্রাকচালকের হাত ধরে পালিয়ে যায় রিমু আক্তার। এরপর আমরা আর তার কোনো খোঁজ করিনি। শুনেছি বৃহস্পতিবার সে তার একটি শিশুসহ আমাদের বাসায় এসেছিল। আমি সে সময় বাসায় ছিলাম না। পরে শুনেছি কোলের শিশুটিকে রেখে সে নাকি পালিয়ে গেছে। আমরাও তার খোঁজ করছি। কিন্তু বর্তমানে সে কোথায় আছে আমরা জানি না।
আরো পড়ুন:
সব প্রস্তুতি শেষ, রাবির ভর্তি পরীক্ষা সোমবার ও মঙ্গলবার
সব প্রস্তুতি শেষ, রাবির ভর্তি পরীক্ষা সোমবার ও মঙ্গলবার

পুজার চাঁদা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ: আহত ৪, আটক ৫অজ্ঞাত শিশুর মরদেহ উদ্ধার

কামাতপাড়া এলাকার গৃহবধূ পেয়ারা বেগম বলেন, সন্ধ্যায় রিমু আক্তার শিশুটিকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসে এবং শিশুটিকে দত্তক নিতে বলে। আমি বাসায় মেহমান আছে বলে শিশুটিকে নিতে অস্বীকৃতি জানাই। এরপর কি হয়েছে জানি না। পরে শুনলাম শিশুটিকে রেখে সে পালিয়ে গেছে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জহির হোসেন বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ের পর প্রায় ১০ বছর হয়ে গেছে। এখনো কোনো সন্তান হয়নি। এ জন্য সে শিশুটির সব রকম দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। শিশুটিকে আমাদের পরিবারে দেয়া হলে আমরা তাকে নিজের সন্তানের মতোই লালনপালন করব। তার ভবিষ্যতের জন্য যা করা দরকার তাই করতে রাজি আছি আমরা।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, শিশুটিকে বর্তমানে হাসপাতালেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সেখানে দুজন নারী পুলিশও রয়েছে। আগে আমরা শিশুটির পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন থানায় এই তথ্য পাঠাব। শিশুটির মা বা প্রকৃত অভিভাবক যদি খুঁজে পাওয়া যায় তবে তাদের হাতে শিশুটিকে তুলে দেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, কোনো মা যদি নিরাপত্তার অভাবে শিশুটিকে এভাবে রেখে যায় তবে তা খুবই দুঃজনক। এই ফুটফুটে বাচ্চার ভবিষ্যৎকে সুন্দর করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। আমরা সবাই মিলে এই দায়িত্ব পালন করব। শিশুটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যা করা দরকার আমরা তাই করার চেষ্টা করব।

অক্টোবর ১৯, ২০১৯ at ০৭:২৬:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক//তম/ওমি