পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যস্ততায় বাবা-মাকে এক সাথে পেল শিশু

মধ্যস্ততাকারীর আসনে টাঙ্গাইলের গোপালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত সিনিয়র পুলিশ সুপার আমীর খসরু। তার সময়োচিত হস্তক্ষেপে ভেঙ্গে যাওয়া ঘর জোড়া লাগে। দুই বছরের বাচ্চা পুণরায় এক সাথে ফিরে পায় বাবামাকে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বছর ছয়েক আগে হাদিরা ইউনিয়নের হাউলভাঙ্গা গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র ফারুখ হোসেন গোপালপুর পৌরসভার ডুবাইল গ্রামের আকবর আরীর কন্যা লাকী খাতুনকে ৯০ হাজার টাকা কাবিনমূলে বিয়ে করে। বিয়ের দুই বছর পর লাকী দম্পতির কোল জুড়ে আসে এক সন্তান। কিন্তু সুখের সংসারে প্রবেশ করে যৌতুকের ঘোরতর দাবি। ফলে সংসারে নেমে আসে চরম অশান্তি। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের এ দাবি এক পর্যায়ে নির্যাতনে রূপ নেয়। তিন লক্ষ টাকার দাবি না মেটানোতে লাকীকে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। শিশু সন্তান নিয়ে লাকি উঠেন বাবার সংসারে। এর মধ্যে গত ৫ জুন বাবামার পরামর্শে ফারুখ হোসেন লাকিকে তালান দেন। অসহায় লাকীর পরিবার প্রতিকার দাবি করে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হন।

এমতাবস্থায় গোপালপুর সার্কেলের সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু সম্প্রতি বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। কয়েক ঘন্টাব্যাপি বৈঠকেও উভয় পক্ষকে এক বিন্দুতে মেলাতে অসমর্থ হন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। তাই স্বামীস্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে আলাদা করে বসেন। অনেক মান-অভিমান, কথাকাটাকাটির পর স্বামীস্ত্রী ও সন্তানের চোখের জল বিনিময় ঘটে। তারপর সবকিছু সহজ হয়ে যায়। পুনরায় ঘর বাঁধার মমতা জাগ্রত হয়। উভয়পক্ষের অভিভবকরাও চোখের জল বিনিময় করে দম্পতির নতুন মিলনকে মন থেকে মেনে নেন। অনুষ্ঠান স্থলেই নিয়মানুযায়ী তালাক অকার্যকর করে স্বামী-স্ত্রী সন্তান একসাথে নতুন প্রত্যয়ে সংসার জীবনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। এ সময় সকলকে মিস্টি খাইয়ে আপ্যায়ন করেন আমীর খসরু।

লাকি খাতুন জানান, সংসার ভাঙ্গা হৃদয়ভাঙ্গার চেয়েও শতগুণ কষ্টের। আমীর খসরু সাবের জন্য তার ভাঙ্গা সংসার জোড়া লেগেছে। স্বামী, সন্তান নিয়ে বসবাসের পরম সুযোগ পেয়েছেন। এজন্য লাকি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ফারুখ অনুভূতি জানিয়ে বলেন, সব ভুলবোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আবার ফিরিয়ে পেয়েছি। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন নতুন করে সব শুরু করতে চাই। আর অন্ধকার থেকে আলোয় আসার সুবুদ্ধ দিয়েছেন আমীর খসরু সাহেব। তাকে স্যালুট।

এ ব্যাপারে গোপালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু জানান, মানুষ সুখের জন্য সংসার বাঁধে। সেখানে অনেক সময় কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়। এ বন্ধুর পথে কখনো-সখনো মানঅভিমান বা সাময়িক ভুলবোঝাবুঝির অবতারনা হতে পারে। কিন্তু সেটিকে অভারকাম করে সুখেদুখে মিলেমিশে থাকার নামই সংসার। সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার বেদনা খুবই কষ্টদায়ক। সরকারি দায়িত্বের কিছুটা বাইরে গিয়ে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজটি তিনি করেছেন।