মাতৃক্রোড়ের শিশু, পিতৃকোলে হত্যা

শিশুরা তার মাতৃকুলে নিরাপদ। মাতৃদুগ্ধ পান করে বড় হয়। বায়োলজিক্যাল জন্ম কৌশলের কারণে শিশুর জন্ম দাতা তার পিতা হয়। জন্মদাতা আর পিতা এক জিনিস নয়।

তুহিনের বাবা খাওয়া দাওয়ার পরেই নিজেই ছেলেকে ঘুম পাড়িয়েছেন। কি অদ্ভুত তার পরিকল্পনা। তুহিন অথবা তার মা কিভাবে বুঝতে পারবে?

নিজের পুত্রকে হত্যা করার জন্য নিজের ভাই এবং ভাইয়ের ছেলে? বছিরের ভাই নাসির। নাসিরের ছেলেকে হত্যা করতে কিন্তু পারেননি। পুত্র হত্যা বছির একজন বোকা, খাটাশ, অমানুষ, মূর্খ, নরপিচাশ, পিতৃত্বের কলঙ্ক!

পুত্রকে হত্যা করে অন্যকে ফাঁসাতে হবে। এই তাই ভাড়া করেছেন নিজের ভাই এবং ভাতিজা কে। ভাই এবং ভাতিজা কত বড় পশু হলে এই কাজে অংশগ্রহণ করে।

পুত্রকে কেউ হত্যা করলে যেকোনো পিতার ঘাড়ে পুত্রের লাশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী জিনিস হয়ে দাঁড়ায়। পিতা ,বাবা, জন্মদাতা হতে হলে কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। সেই যোগ্যতা অর্জন না করেই বশির পিতা বা জন্মদাতা হয়েছে।

বছিরের পিতা কিন্তু বসিরকে হত্যা করেননি। কিন্তু বছির তার সন্তানকে হত্যা করেছে। এতে তার অশিক্ষা অযোগ্যতা পশুসুলভ আচরণ মানসিক বিকৃতির চরমপত্র ফলন ঘটেছে। সামাজিকভাবে সে অসুস্থ ছিল। সন্তানের প্রতি মায়া মমতা ভালোবাসা স্নেহ পারিবারিক সামাজিক ধর্মীয় কোন বন্ধন ছিল না।

মাতৃ আশ্রয়ের শিশু পিতৃ আশ্রয়ে একটি রাত ও থাকতে পারেনি। পুত্রের অসুস্থতায় বাবার প্রার্থনা বাবার নিজের জীবনের বিনিময়ে পুত্রের অসুস্থতা কাটানোর প্রার্থনা নজির আছে।

শিশুপুত্রের সাত বছর হওয়ার আগেই পিতা অভিভাবকত্ব পায়না। নরপশু বছির ৫ বছর বয়সী শিশুকে নিজের স্বার্থ হত্যা করে এদেশের সমাজ, পিতৃত্ব তোকে কলঙ্কিত করেছে।

এর আগেও কোন এক জায়গায় পিতা তার মেয়েকে হত্যা করে অন্যদেরকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করে সেটি উদঘাটন করেছে।

অন্যকে ফাঁসাতে এমন আত্মঘাতী পরিকল্পনা একজন মানুষ কিভাবে করে? কোন প্রশ্নের মধ্যে এমন আচরণ দেখাও যায় না।

আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরা বাসটার্মিনালের সংঘর্ষ, আহত ১০
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন আদায়ে চার দেশে সফরের সিদ্ধান্ত

মাতৃ কোলের শিশু তার জন্মদাতার কাছে নিরাপদ না হলে কোথায় নিরাপদ হবে?

গর্ধব বছির শিশুটিকে হত্যা করে কান এবং লিঙ্গ কেটে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। ওই সময় শিশুটি বাবা বাবা মা মা করে নিশ্চয়ই কানতে ছিল। না অন্য কিছু বলতে ছিল বছিরের কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করছে। হত্যা করার পরেও কিভাবে নিজের পুত্রের পেটের ভেতর পরপর দুইটি শরীরটাকে দিয়ে আবার সেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে।

ছি কল্পনা করা যায় না। যখন রাত্রে বেলায় ঘুম থেকে জেগে উঠলে ছেলেটিকে পানি দেওয়ার কথা সেসময় বশির দিল ছুরির আঘাত। রক্ত দিয়ে খেলা করলো শত্রুদের নিশানা দমাতে। ৫ বছরের শিশুর জন্য সহজেই পেরেছে। তুহিন যদি 17 বছরের শাহরিয়ারের মত হত তাহলে কিন্তু পারত না। তখন এমন করতে যেয়ে বছিরকে ও বলিদান হতে পারত।

তুহিনের মায়ের শোক সহ্য করার ক্ষমতা হয়তো হবেনা। মাতৃকোলের শিশুকে এভাবে দেখা অনেক যন্ত্রনার।এরকম কিছু মানুষের পিতা-মাতার জন্মদাতা হওয়ার একটি সামাজিক শিক্ষা প্রয়োজন। ন্যূনতম নৈতিক ও সামাজিক বন্ধন এর শিক্ষা না থাকলে অবক্ষয় থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে এই ঘটনা উদঘাটন করায় আমার নিজেরও খুব গৌরব অনুভব করছেবছিরের মতো আর কেউ যেন এমন ঘটনা পৃথিবীতে না ঘটায়। সে প্রার্থনা করি।

লেখক: ইমাউল হক, পিপিএম
পুলিশ পরির্দশক