গুজিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুজিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ তোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে পকেট গভর্ণিং বডি গঠন, মেয়াদ উত্তির্ন এডহক ও নব গঠিত গভর্ণিং বডির সভাপতির স্বাক্ষরে অবৈধভাবে শিক্ষদের বেতনভাতা উত্তোলন, অস্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ, পূর্বের কমিটির দাতা সদস্যকে না জানিয়ে দাতা সদস্য নির্বাচন, দাতা সদস্যর টাকা ব্যাংকে জমা না হওয়া, অভিযোগ থাকার পরও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া, গভর্ণিং বডি গঠনের নির্বাচনি তফসীলে বর্ণিত সময়ের মধ্য একদিন ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

শিপন, আতিকুর, ভূট্টা ও জাহিদুর রহমান কর্তৃক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রথম এডহক কমিটির মেয়াদ ৬ই মার্চ ২০১৯ থেকে ৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং পর্যন্ত হলেও সেই কমিটির আওতায় ৫মাস বিলভাতা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছে বর্তমান অধ্যক্ষ তোজাম্মেল হক।

এছাড়াও বর্তমান কমিটি গঠন সংক্রান্ত কোন নোটিশ নোটিশ বোর্ড বা পত্রিকায় প্রকাশ না করেই ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করা হয়। পাশাপাশি দ্বাদশ শ্রেণীর ১০জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের নাম ভোটার তালিকায় না থাকা, নমিনেশন উত্তোলনের তিন দিন সময়ের মধ্যে ১দিন জুন ক্লোজিং থাকা, ৬ষ্ঠ শ্রেনির একজন শিক্ষার্থী যার রোল নং-২২ ভোটার তালিকায় নাম না থাকাসহ অর্থ আত্মসাৎ ও পাঠ দানের অনিয়ম অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে, বর্তমান গভর্ণিং বডির গঠনের মিটিং এর ৩দিনের মধ্যে অনুমোদনের তালিকা জমা না দিয়েই জুন ২০১৯ইং মাসের শিক্ষকদের বেতন উত্তোলন করা হয়েছে মর্মেও অভিযোগ তুলেছে অভিভাবকরা। এ সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে যাহার নং-১০১৭০। যাহা শুনানির জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন :
মঙ্গলবার আবরার হত্যায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিটের শুনানি
ছাত্রলীগ থেকে অমিত সাহাকে বহিষ্কার

এছাড়াও ডিসি, ইউএনও, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বিষয়গুলো নিয়ে অনুরুপ অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দেওয়া অভিযোগের তদন্তভার দেওয়া হয় শিবগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে। উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা গোলাম রব্বানি তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করে।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগকারীদের আনিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ভোটার তালিকায় দ্বাদশ শ্রেণীর ১০জন ভোটারের নাম বাদ পরেছে। কিন্তু সার্বিক বিচারে গভর্ণিং বডি নির্বাচনকে বৈধ্যতা দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি ভুক্তভোগী অভিযোগকারী অভিভাবকদের কাছে শুভঙ্করের ফাঁকি মনে হয়েছে। জানতে চাইলে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুরানী আক্তারের পিতা নাসির বলেন, আমার মেয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়ার পরেও ভোটার তালিকায় আমার নাম নেই। এমনি কি আমিসহ আরোও ১০জন অভিভাবকের নাম ভোটার তালিকায় নেই।

এছাড়াও ভোটার হবে দ্বাদশ শ্রেণীর কিন্তু দেখানো হয়েছে একাদশ শ্রেণীর । ৬ষ্ঠ শ্রেণীর একজন ছাত্রীর নামও নেই ভোটার তালিকায়। বর্তমান অধ্যক্ষ সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে গভর্ণিং বডি গঠন করেছে। বিদ্যালয়ের পড়ালেখার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ততোঁধীক শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের প্রতিষ্ঠানের পড়া লেখার মান খুব ভালোনা। বিষয়টি একাধিক অভিভাবকরাও জানিয়েছে। পূর্বের গভর্ণিং বডির দাতা সদস্য জহুরুল ইসলাম জানায়, দাতা সদস্যর টাকা ব্যাংকে প্রদান না করে বিদ্যালয়ের রশিদমূলে অন্যায় ভাবে জমা দেখানো হয়েছে। অবগত না করেই অধ্যক্ষ বেআইনি ভাবে দাতা সদস্য নির্বাচন করেছে।

এমনকি নির্বাচন সম্পর্কেও আমি কিছুই জানতে পারলামনা। অনিয়ম করে গভর্ণি বডি নির্বাচন করায় আমরা হতাশ হয়েছি। মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিলকারী অভিভাবক শিপন ও ভুট্টা বলেন, অধ্যক্ষ অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে মনগড়াভাবে গভর্ণিং বডি গঠন করেছে। আমরা গভর্ণিং বডি বাতিলের জন্য মহামান্য হাইর্কোটে রিট পিটিশন দাখিল করেছি।

সোনালী ব্যাংক গুজিয়া শাখার ম্যানেজার নাজিমুল হক বলেন, আমরা সঠিক ডকুমেন্ট ছাড়া শিক্ষকদের বেতনভাতা প্রদান করিনা। এ বিষয়ে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তা আমি খতিয়ে দেখবো।

উপরোক্ত অভিযোগের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ তোজাম্মেল বলেন, সার্বিক ভাবে নিয়ম মেনেই আমি সব কিছু করেছি। কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় করার ও প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মতামতের ভিত্তিতেই আমি সব কাজ করেছি।

অপরদিকে এলাকার একাধিক সচেতন ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, অধ্যক্ষ নিজের পছন্দের ব্যক্তি ও নিকট আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে কৌশলে গভর্ণিং বডি গঠন ও বিভিন্ন সময় নিয়োগ বাণিজ্যের জনশ্রুতি রয়েছে।

অক্টোবর ১৪, ২০১৯ at ১৭:১০:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/তআ