চাঁদপুরের দূর্গমচরে ইলিশ নিধন বন্ধে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের সিদ্ধান্ত

প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় পঞ্চম দিনের মতো চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় জেলা প্রশাসন, মৎস্যবিভাগ ও নৌ পুলিশের অভিযান ও টহল অব্যাহত রয়েছে। নৌপুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা অভিযান চলে। এ সময় পদ্মা ও মেঘনার দূর্গমচর রাজরাজেশ্বরে জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। অন্যদিকে, মা ইলিশ রক্ষায় জেলা পুলিশ ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রজনন মৌসুমে নদীতে মা ইলিশ না ধরতে জেলেদের প্রতি অনুরোধ জানান নৌ পুলিশের ডিআইজি। এ সময় দূর্গমচর রাজরাজেশ্বরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের ঘোষণা দেন তিনি। এতে নির্বিচারে মা ইলিশ ও জাটকা শিকারের ব্যস্ত বেপরোয়া জেলেদের নিবৃত্ত করা যাবে।

গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় সহকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর সদরঘাট থেকে লঞ্চযোগে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন নৌপুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। পরে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর বিভিন্নস্থান ঘুরে ভোরে দূর্গমচর রাজরাজেশ্বরে যান তারা। সেখানে তাদের দেখে জেলেরা প্রথমে মারমুখি হলেও শেষপর্যন্ত নৌপুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলামের আচরণে জেলেদের রূঢ় আচরণের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ডিআইজি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ইলিশ রক্ষা পেলে আপনাদেরই লাভ। আর এভাবে নির্বিচারে নিধন করলে জেলেদের অর্থাৎ আপনাদেরই ক্ষতি।

এ সময় অভিযানে নৌপুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মো. রফিকুল ইসলাম, চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার জামরে আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানসহ মৎস্যবিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

আরও পড়ুন:
প্রবাসী ভোটারদের অনলাইনে আবেদন
সময় থাকতে দ্রুত সরে দাঁড়ান সরকারকে ড. কামাল

এদিকে, পৃথক আরেক অভিযানে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী রইসউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় দেড়’শ কেজি ইলিশ ও ৭০ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, জব্দ করা ইলিশ দুঃস্থদের মাঝে এবং এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁদপুরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে ২৭ জেলেকে আটক করা হয়েছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে বেপরোয়া জেলেদের নদীতে না নামার জন্য ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। এই জন্য সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী নদীপারে গিয়ে নৌকা থেকে ইঞ্জিন খুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এই ক্ষেত্রে অনেকটা সফলতা লাভের কথা জানান তিনি। কারণ, জেলে নৌকায় ইঞ্জিন না থাকলে তা নদীতে চষে বেড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে পারবে তারা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণে আইন প্রয়োগকারী একাধিক সংস্থা ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগ দায়িত্ব পালন করলেও সমন্বয় নেই। ফলে কোথাও কঠোর আবার কোথাও ঢিলেঢালাভাবে অভিযান চলছে। ফলে নানা ফাঁক-ফোকর দিয়ে এখনো একশ্রেণির জেলে মা ইলিশ নিধনের তৎপর রয়েছে।

অক্টোবর ১৩, ২০১৯ at ২৩:১৪:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/কাক/এএএম