রাজশাহী নগরীর টার্মিনালের সামনে সারিবদ্ধ বাসের পার্কিং, তীব্র যানজট

রাসিক মেয়রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে টার্মিনালের সামনে মহাসড়কে সারিবদ্ধ ভাবে যাত্রীবাহি বাসের পাকিং করছে বেপরোয়া চালকরা। এতে প্রায় সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাধারন যানবাহন ও পথচারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সড়কে বাসের বিশৃঙ্খলা রাজশাহীতে যাত্রীবাহী বাসের দাঁড় করানো এবং যাত্রী তোলা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই এই বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে।

টার্মিনালের ভেতরে বাস না রেখে রাখা হচ্ছে রাস্তার ওপর। আর যাত্রী তুলতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চালু করা হয়েছে টিকিট কাউন্টার। সেখানে রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে রেখে তোলা হয় যাত্রী। এতে রাস্তার ওপর দেখা দেয় যানজট। ফলে দুর্ভোগের শিকার হন মানুষ। রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, শিরোইল ভদ্রা সড়কের দুই পাশেই অন্তত ৩০টি বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

সড়কের ওপরেই চলছে বাসের মেরামত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। এর ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়ে দেখা দিচ্ছে যানজট। পথচারিদের চলাচলেও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, সারাবছরই এখানে এভাবে বাস রাখা হয়। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় যাত্রী নামিয়ে বাস পরিস্কার করছিলো এক স্টাফ। টার্মিনাল ছেড়ে রাস্তায় কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাস ভেতরে ঢোকালে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই কম সময়ের জন্য বাস থামিয়ে রাখার প্রয়োজন হলে রাস্তার ওপরেই রাখা হয়।

রাস্তার ওপর ছিলো ‘মোহনা পরিবহন’ নামের আরেকটি বাস। চালক আরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টার্মিনালের ভেতরে কাদাপানি। সেখানে গাড়ির নিচে ঢুকে শুয়ে শুয়ে কোনো মেরামতের কাজ করা যায় না। তাই রাস্তার ওপর রেখে কাজ করতে হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি হয় তা স্বীকার করেন আরিফুল। তবে তাদেরও কোনো উপায় নেই বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন :
শুদ্ধি অভিযান চলবে সারাদেশে: ওবায়দুল কাদের
দেশের মানুষ সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে: মোমিন মেহেদী

তবে নগরীর যানজট নিরসন ও যাত্রীদের উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বড় পরিসরে নগরীর নওদাপাড়ায় নতুন একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে ২০১১ সালে। সব বাস সেখানেই রাখার কথা। কিছু বাস নওদাপাড়া থেকে চলাচল করে। কিন্তু বাস মালিক ও শ্রমিকরা শিরোইল এলাকার এই বাস টার্মিনাল এখনও ছেড়ে যাচ্ছেন না। এর ফলে শিরোইল এলাকার যানজট কমছে না।

এদিকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা ও আন্তজেলা রুটের বাস ছাড়লেও সেসব বাসে নগরীর ভদ্রা স্মৃতি অম্লান, তালাইমারী মোড়, রেলগেট ও সিটি বাইপাস মোড়ে গিয়ে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠানো ও নামানোর কাজ করে। ফলে এ তিনটি মোড়ও এখন বাস টার্মিনালে পরিণত হয়েছে।

এতে যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রেলগেট এলাকার বাসিন্দাদের। এলাকাটি অত্যন্ত ব্যস্ততম হওয়ার কারণে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের চাঁপাইনবাবগঞ্জমুখী এবং রাজশাহী নওগাঁ সড়কের নওগাঁমুখী বাস এসে দাঁড়ালেই এখানে যানজট দেখা দেয়।

কিন্তু তারপরেও বাস থামে। যাত্রী ওঠানো হয়। আর দুই দিকের যাত্রীদের জন্যই এখানে অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে টিকিট কাউন্টার। সেখানে প্রায় সারাদিন রাত ট্রাফিক সার্জেন্ট থাকলেও এ যানজটে কোন ভূমিকা দেখা যায় না। এসব কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। বাসগুলো এসে সেখানে ১০ থেকে ২০ মিনিট করে দাঁড়িয়ে থাকে।

এভাবে একের পর এক অন্তত ছয় থেকে সাতটি করে বাস দাঁড়িয়ে থাকে। একইভাবে শিরোইল এলাকায় রেলস্টেশনের সামনে ঢাকাগামী বাসগুলোও দাঁড়িয়ে থাকে। তাই এলাকাটির নাম ঢাকা-বাসস্ট্যান্ড হয়ে গেছে। কিন্তু এই বাস স্টেশন গুলোর কারণে দেখা দেয় যানজট।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) তথ্যমতে, রাজশাহীতে বৈধ বাস টার্মিনালের সংখ্যা তিনটি। আরডিএর এস্টেট কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান জানান, রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা বাসস্টেশন গুলোর কোনো অনুমতি নেই। এগুলো বাস মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের সুবিধামতো গড়ে তুলেছেন।

এসব স্থানে যাত্রী তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর রেলগেটে বাসচালক আনোয়ার হোসেন বলছেন, যাত্রীরা এখন টার্মিনালের দিকে যান না। বিশেষ করে শহর থেকে দুরে হওয়ায় নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে যাত্রী পাওয়া যায় না। ফলে সেখান থেকে বাস ছাড়া হলেও শহরের ভেতরে এসে যাত্রী তুলতে হয়। এ নিয়ে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন গ্রুপের সহ-সভাপতি মনজুর রহমান পিটার বলেন, অটোরিকশা, সিএনজি এবং ইমা রাজশাহীর কোর্ট থেকে সরাসরি পুঠিয়া, গোদাগাড়ী, নওগাঁ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে।

সাধারণ যাত্রী পকেটের টাকা খরচ করে আর টার্মিনালে যাচ্ছে না। আমরা বারবার প্রশাসনকে অনুরোধ করে বলেছি, প্রধান সড়কে তিন চাকার যান বন্ধ করতে। এই বিষয়গুলো আগে সমাধান হওয়া প্রয়োজন। তাহলে যাত্রী এবং বাস টার্মিনাল মুখি হবে। এর ফলে শহরের যানজটও কমে আসবে। আর টার্মিনালের ভেতরেই যেন বাস রাখা যায় তার জন্য নিয়মিতভাবে সংষ্কার কাজ করতে হবে। তা না হলে মেরামতের কাজ সড়কেই করতে হবে। আর এ অনিয়ম সহজে বন্ধ করা সম্ভব হবেনা বলেও জানান তিনি।

অক্টোবর ১৩, ২০১৯ at ২০:০২:৪১ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এমআরআর/আজা