৪৫০ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য রাজধানীতে

রাজধানীতে বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে অর্থ লুটপাটের বিশেষ চক্র। রাজধানীবাসীকে জিম্মি করে বছরে অন্তত ৪৫০ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন। এঁদের ওপর দুই সিটি করপোরেশনের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই।

কিন্তু চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে। এ জন্য নগরবাসীকে আলাদা কোনো টাকা দিতে হয় না।

রাজধানীতে প্রতিটি বাসা বা ফ্ল্যাটের জন্য সিটি করপোরেশন–নির্ধারিত মাসিক ৩০ টাকার অনেক গুণ বেশি আদায় করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রসিদ দেন না। সংগ্রহ করা টাকার কোনো অংশ সিটি করপোরেশন পায় না। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় জোর খাটিয়ে ময়লা সংগ্রহের কাজ এবং এলাকা দখলের মতো ঘটনাও ঘটছে।

অবশ্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন চাইলেই রাজধানীর বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে এমন বাণিজ্য বন্ধ করতে পারত বলে মনে করেন নগরবাসী। বর্জ্য সংগ্রহে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি শৃঙ্খলা এনেছে। সেখানকার সিটি করপোরেশন নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ করে। সিটি করপোরেশন বর্জ্য সংগ্রহকারীদের বেতন দেয়। সিটি করপোরেশনের আদায় করা গৃহকরের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই করের টাকা দিয়েই চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের কাজ পরিচালনা করছে।

অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও প্রতিবছর গৃহকরের ৩ শতাংশ নেয় পরিচ্ছন্নতা বাবদ। গত অর্থবছরে বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ১৫০ কোটি টাকার বেশি পরিচ্ছন্নতা কর আদায় করেছে। অথচ তারা বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ না করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, আইন অনুযায়ী বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের সুযোগ সিটি করপোরেশনের রয়েছে।

বর্তমানে ঢাকার দুই সিটিতে বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি বারোভূতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং গুলশান সোসাইটির সাবেক সভাপতি এ টি এম শামসুল হুদা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা ঢুকে যাওয়ায় এবং তাঁদের স্বার্থ থাকায় পেশাগতভাবে কাজটি হচ্ছে না। যেভাবে পারছেন, টাকা তুলে নিচ্ছেন। এটার নিয়ন্ত্রণ দরকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত নিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ ফি নির্ধারণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব বর্জ্যের অধিকাংশই বাসা–রেস্তোরাঁ থেকে সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বাসাবাড়ি বা রেস্তোরাঁ থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নেই। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা রাস্তার পাশে ময়লার কনটেইনার এবং ময়লা রাখার ঘর বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এই সুযোগে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে কনটেইনার কিংবা এসটিএস পর্যন্ত নিয়ে যান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের গাড়ি ময়লা আমিনবাজার ও মাতুয়াইলের ভাগাড়ে নিয়ে যায়।

বেসরকারিভাবে বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে (পিডব্লিউসিএসপি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহযোগী সংগঠন হিসেবে সিটি করপোরেশন থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত আছে। তবে এসব সংগঠনের বিষয়ে কোনো নীতিমালা সিটি করপোরেশনের নেই।

আবার সিটি করপোরেশনে নিবন্ধিত নয় এমন অনেক ব্যক্তি ও সংগঠন বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, নিবন্ধিত সংগঠনের বাইরে আরও দেড় শতাধিক ব্যক্তি ও সংগঠন বর্জ্য সংগ্রহ করে। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দুই ধরনের সংগঠনই নিয়ন্ত্রণ করেন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি বাসা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার সক্ষমতা সিটি করপোরেশনের নেই। তাই বেসরকারি সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। সংগ্রহকারীরা এলাকাভেদে কোথাও ৩০ টাকা, আবার কোথাও ৩০০ টাকা নিচ্ছে। অবশ্যই এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। এলাকাভেদে বর্জ্য সংগ্রহের মূল্য সমন্বয় করা হবে। তবে মেয়র দাবি করলেও রাজধানীর কোনো এলাকায় ৩০ টাকা নিতে দেখা যায়নি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও বর্জ্য সংগ্রহের ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন। ময়লা–বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনেক সময় কাউন্সিলররা তাঁদের নিজের বা দলীয় লোক দিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করাতে চান। তখন আগে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া আছে, তাঁরা প্রতিবাদ করেন।

৪৫০ কোটি টাকার বাণিজ্যঃ
বাসাবাড়ি বা রেস্তোরাঁ থেকে ময়লা সংগ্রহের জন্য মাসে বা বছরে কত টাকা আদায় করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য কারও কাছে নেই। তবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে রাজধানীর ময়লা–বাণিজ্যের একটি ধারণা পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন:
কাশ্মীরে গ্রেনেড হামলা, আহত ৭
জাপানে প্রলয়ঙ্করী টাইফুন হাগিবিসের আঘাতে নিহত ১৯ আহত ৯০

দুই সিটি করপোরেশনের হিসাবে হোল্ডিং রয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৫টি। অধিকাংশ হোল্ডিংয়ে ৬ থেকে ১২টি করে ফ্ল্যাট বা বাসা রয়েছে। একটি হোল্ডিংয়ে গড়ে ৬টি ফ্ল্যাট বা বাসা রয়েছে। আর প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে গড়ে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হয়। এই হিসাবে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ মাসে প্রায় ৩৬ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে; বছরে যা প্রায় ৪৩২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, রাজধানীতে সাত হাজারের বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে। প্রতিটি রেস্তোরাঁ থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ মাসে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। অভিজাত এলাকাগুলোতে এই টাকার পরিমাণ আরও বেশি। সাত হাজার রেস্তোরাঁ থেকে মাসে আদায় হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকা।

সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, প্রতিটি রেস্টুরেন্ট থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এটা একটা বাড়তি খরচ। সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। রেস্টুরেন্টের মালিকেরা নিরুপায় হয়েই টাকা দিচ্ছেন। গুলশান ১ নম্বরে অবস্থিত নিজের রেস্তোরাঁ থেকে তাঁকে বর্জ্য সংগ্রহকারীদের প্রতি মাসে চার হাজার টাকা দিতে হয়।

ক্ষমতাসীনদের দখলে বাণিজ্যঃ
দুই সিটির ২৪টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ৫টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও তাঁর লোকজন। বাকি ওয়ার্ডগুলোতে ময়লা–বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন এমন ৫৮ জনের দলীয় পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন আওয়ামী লীগ, ১৪ জন যুবলীগ, ৭ জন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ৫ জন শ্রমিক লীগ, ২ জন মহিলা লীগ, ৪ জন ছাত্রলীগ এবং কৃষক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের একজন করে নেতা রয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জিগাতলা এলাকার অধিকাংশ বাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিমের সহকারী (পিএস) খলিলুর রহমান। খলিলুর রহমান বলেন, ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের অনুমোদন তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে। নিজের অনুমোদিত এলাকার মধ্যেও কিছু এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

ধানমন্ডি এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ফারুক খানের প্রতিষ্ঠান। লালমাটিয়া এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি এ বি এম গোলাম নোমানি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বনানী, গুলশান ১ ও ২ নম্বর এলাকার বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয় করেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র ঘোষ এবং বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুন।

মো. মামুন বলেন, গুলশান–বনানীর সড়কগুলো থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজটি তাঁরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। এ নিয়ে আগে ঝামেলা থাকলেও এখন কোনো সমস্যা নেই।

পশ্চিম রামপুরা এলাকায় বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম সিদ্দিক ওরফে কাজল। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজারের (ডিএসসিসি ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড) বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি নিয়ন্ত্রণ করেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী ওরফে গৌরব। তাঁর বাবা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফী।

জোরজবরদস্তিঃ
সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন অনুযায়ী, গুলশানের ৬৪ ও ৬৫ নম্বর সড়কের ময়লা সংগ্রহ করার কথা খাদিজা ক্লিনিং সার্ভিসের, যার মালিক আবদুস ছাত্তার ওরফে ফারুক। কিন্তু গত বছর থেকে এই ময়লা সংগ্রহের কাজ যুবলীগ নেতা জাকির জোর করে দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

ছাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার লাইসেন্স, কিন্তু আমারে কাজ করতে দেয় না। দুইটা ভ্যান ছিল, সেগুলা বসায় রাখসি। এখন সড়কে গেলে মারামারি কইরা কাজ নিতে হবে। গ্যাঞ্জামে যেতে চাই না।’ এ বিষয়ে জাকিরের দাবি, ফারুক নিয়মিত ময়লা সংগ্রহ না করায় তিনি নিজেই কাজটি করছেন।

মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বি এবং সি ব্লকে আগের সংগ্রহকারী দুটি সংগঠনের লোকজন এখন আর এলাকায় ঢুকতে পারেন না। নাম না প্রকাশের শর্তে প্রতিষ্ঠান দুটির লোকজন বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলরের সহকারী নুরনবী ও তাঁর ভাই শাজাহান তাঁদের কাছ থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজ ছিনিয়ে নিয়েছেন। জানতে চাইলে নুরনবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে যারা ময়লা নিত, তারা ৩-৪ দিন আসত না। তাই কাউন্সিলর এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে দায়িত্ব দিয়েছে।’

গুলশানের ১০৪ থেকে ১১৫ নম্বর সড়ক পর্যন্ত ভাই ভাই সমাজকল্যাণ সংঘের ময়লা সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু এই সড়কের ময়লা সংগ্রহের কাজ গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতা আজিজুলের নিয়ন্ত্রণে।

জিম্মি করে টাকা আদায়ঃ
১৯৮০–র দশকের শেষ দিকে কলাবাগান এলাকায় প্রথম বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। পরে পুরো রাজধানীতে একই রকম ব্যবস্থা চালু হয়। শুরুতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, এলাকার ব্যক্তিরা মিলে সমাজসেবামূলক কাজ হিসেবে বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি করতেন। ২০০০ সালের পরে ময়লা–বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বিএনপির স্থানীয় নেতা–কর্মীদের কাছে। এ সময় ময়লা সংগ্রহে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ফি ছিল না।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বর্জ্য সংগ্রহের নিয়ন্ত্রণ নেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। ওই বছর অবিভক্ত সিটি করপোরেশন একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে মাসিক ফি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। যেটি এখন আর কেউ মানে না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহকারী সংগঠনগুলোর সভাপতি নাহিদ আকতার বলেন, এলাকায় যারা ময়লা সংগ্রহ করে, তারা নিজেদের মতো টাকা নির্ধারণ করে। অনেক বছর আগে সিটি করপোরেশন ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সেটি পুনর্নির্ধারণের জন্য একাধিকবার বলা হলেও কাজ হয়নি।

এখন ময়লা সংগ্রহকারীরা এলাকাভেদে বাসাপ্রতি ৮০-১৫০ টাকা নিচ্ছে। কোথাও সেটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডির মতো এলাকায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকাও আদায় করা হচ্ছে। আবার একই পাড়া, মহল্লায় কিংবা একই বাসাবাড়িতে একজনের বিলের টাকার পরিমাণের সঙ্গে অন্যজনের বিলের পার্থক্য রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বাসা কত তলায় অবস্থান করছে, সে হিসাবেও নির্ধারণ করা হয় টাকার পরিমাণ।

ধানমন্ডি ৪/এ সড়কের বাসিন্দা রাজীব হাসান বলেন, ‘আমার বাসা থেকে এখন প্রতি মাসে ৩০০ টাকা নেওয়া হয়। রোজার ঈদের আগে নেওয়া হতো ২৫০ টাকা। ঈদের পর থেকে হুট করেই ৫০ টাকা বাড়ানো হয়। এভাবে টাকা বাড়ানো হলেও অভিযোগ শোনার কেউ নেই।’ একই চিত্র গুলশান এলাকায়। গুলশান ১ নম্বরের ২ নম্বর সড়কের বাসিন্দা রওনক সুরাইয়া বলেন, ভবনে ১০টি ফ্ল্যাট আছে। প্রতি ফ্ল্যাট থেকে ২৫০ টাকা নিচ্ছে বর্জ্য সংগ্রহকারীরা। তা–ও মাঝেমধ্যে ময়লা নিতে আসে না। এ বিষয়ে সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কোনো কথাও বলা যায় না।

বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ণ ও সুশাসন কমিটির সদস্যসচিব ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, বিশ্বের বড় ও উন্নত শহরগুলোতে সিটি করপোরেশনই বাসার বর্জ্য সংগ্রহ করে। বর্তমানে রাজধানীতে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্জ্য সংগ্রহের এই ব্যবস্থাপনাকে আত্তীকরণ করতে হবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাউন্সিলরদের কাজে লাগিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বর্জ্য সংগ্রহে যুক্ত হয়েছেন, এটি আশ্চর্য হওয়ার মতো ব্যাপার না। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন মধ্যস্বত্বভোগীর জায়গা দখল করেছেন। অন্যায়ভাবে দলের নেতা–কর্মীরা দখল চালিয়ে যাচ্ছেন।

অক্টোবর ১৩, ২০১৯ at ১২:২০:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/প্রআ/এএএম