সুযোগে কট্টরপন্থিরা প্রভাব বিস্তারে সক্রিয়

রাজনীতিতে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি হঠাৎ করেই তৎপর হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিনে দলটির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা তা-ই জানান দিচ্ছে। সভা সমাবেশ, মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজপথমুখী হয়েছে দলটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১০ বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে এখন রীতিমতো মধুর কেন্টিনমুখী হয়েছে সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলও।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক, ২০ দলীয় জোটের বৈঠক এমনকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকেও সক্রিয় করছে বিএনপি। আগামীকাল ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের পুরো প্রস্তুতিও রয়েছে বিএনপির ভেতরে।

বিএনপি যখন এই তৎপরতা চালাচ্ছে, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন বিদেশে অবস্থান করছেন। এই সুযোগে বিএনপির কট্টরপন্থি অংশ নিজেদের প্রভাব বাড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দলটির সাম্প্রতিক তৎপরতায় মূল ‍ভূমিকায় রয়েছেন এই অংশের নেতারাই।

গত কয়েক বছরে বিএনপির যেসব নেতাকর্মীকে রাজপথে কিংবা দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি, তারাও ইদানীং সরব হয়ে উঠেছেন। শুধু সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা বিএনপি এখন গা-ঝাড়া দিয়ে রাজপথমুখী হয়েছে। দলটির নেতাকর্মীদের প্রায়ই খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে রাজপথে মিছিল করতে দেখা যায়।

প্রতিদিনই একাধিক সভা সমাবেশ, মানববন্ধনসহ সংবাদ সম্মেলন চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া শনিবার (১২ অক্টোবর) ও রবিবার (১৩ অক্টোবর) দুদিনের সমাবেশের কর্মসূচিও দেয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।

এসব কর্মসূচি থেকে কর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিচ্ছেন নেতারা। এমনকি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও গত সোমবার লন্ডনে এক সমাবেশে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। ডাক দেয়া মাত্র আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরার তাগিদও রয়েছে তার বক্তব্যে। তার এ বক্তব্যের লিখিত কপি, অডিও, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে।

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়। সমঝোতায়ও রাজি নয় সরকার। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন ছাড়া তাকে মুক্ত করা যাবে না। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আন্দোলন করেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এজন্য ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

আরো পড়ুন:
আন্দোলন স্থগিত হবে পাঁচ দাবি বাস্তবায়ন হলেই
তিন স্কুল ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধ, অভিভাবকদের অর্থদণ্ড

এসব কর্মসূচি আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরির প্রাথমিক পদক্ষেপ। যা চ‚ড়ান্তভাবে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ দেখা যাবে। দলটির নেতাদের বিশ্বাস, এবার আন্দোলন জমে উঠবে। একবার আন্দোলন দানা বাঁধলে তা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাবে। যা সরকারের বিদায়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথকে সুগম করবে।

এজন্যই ভারতের সঙ্গে ফেনী নদীর পনি বণ্টনের চুক্তি ও বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যায় শিক্ষাঙ্গন যেভাবে ফুঁসে উঠছে এটাকেই কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। আন্দোলন শুরুর এটাই মোক্ষম সময়- এখনই তৎপর হতে হবে; এমন বিবেচনা দলটির নেতাদের।

সেই বিবেচনা থেকেই তৎপর হয়েছে বিএনপি যা দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কথায়ও স্পষ্ট। রিজভী বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, বিজয় আপনাদের সুনিশ্চিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশে শান্তি ফিরে আসুক, নৈরাজ্য দূর হোক, আইনের শাসন ফিরে আসুক, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে আসুক এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে আসুক- এটাই বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশের জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ হচ্ছে রাজপথ। এই রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারকে হটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক সিনিয়র নেতা বলেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুপস্থিতিতে যেসব নেতা দ্রুত দলের স্থায়ী কমিটি ও ২০ দলের বৈঠক ডেকে আন্দোলনের হুঙ্কার দিচ্ছেন, অতীতে তাদের কাউকেই রাজপথে দেখা যায়নি। আগামীতে এরা রাজপথে থাকবেন, এমন সম্ভাবনাও কম।

একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এই সুযোগে তারা আলোচনায় আসতে চাইছেন। দু-চার দিনের মধ্যে তাদের উৎসাহে ভাটা পড়বে। ওই নেতা জানান, আন্দোলনের জন্য বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন দল গোছানোর কাজ চলছে। আমরা আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নামব। এর জন্য কোনো তাড়াহুড়া নয়; সঠিক সময়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েই আন্দোলনে যাবে বিএনপি।

এদিকে, বিএনপির এই হঠাৎ তৎতরতাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ফেনী নদীর পানির একটি অংশ অনেক আগে থেকেই ভারতের ত্রিপুরায় যেত। এখন এটিকে একটি চুক্তির আওতায় আনা হয়েছে মাত্র।

আওয়ামী লীগের এক মধ্যম সারির নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, ফেনী নদীর পানি ইস্যুকে সামনে এনে বিএনপি তাদের পুরনো ভারতবিরোধী কার্ড খেলতে চায়। কিন্তু তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না। আর তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে। এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

অক্টোবর ১২, ২০১৯ at ১২:০৭:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/এএএম