ঝরে গেল তরতাজা একটি প্রাণ

একটি সাধারণ ফেসবুক স্ট্যাটাসই কাল হলো আবরারের ? স্ট্যাটাসটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে । স্ট্যাটাস হোক বা অন্যকোন কারণই হোক তাই বলে একজন মানুষকে এভাবে পিঠিয়ে মারতে হবে কেন? এ অধিকার কে দিল খুনিদের। নৈতিক চরিত্রের এমন অধপতন ঘটলো আমাদের।

মেধাবি বুয়েট ছাএ আবরার ফাহাদের এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অদম্য এই মেধাবীর হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদ, বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।সচেতন সব মানুষ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

তরতাজা একটি প্রাণ নেওয়া খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন তারা। অথচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ সেভাবে ব্যবস্থা নেয়নি শুরু থেকে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখেই তারা এগিয়েছে।

একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমিও এই নৃশংস ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গও অপরাধীদের ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এর আগেও আমরা দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র হত্যার ঘটনা দেখেছি। কেন বার বার এমন খুনের ঘটনা ঘটছে? কেন সন্তানহারা মায়ের বিলাপ, বাবার আহাজারি আমাদের দেখতে হবে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে গরীব এবং ধনী সকলের সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে পড়তে যায়।

স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে সারজীবন আগলে রাখা বাবা, মা ও ভাই-বোনের কষ্টের দিনকে শেষ করবে, তাদের একটি উন্নত জীবন দেবে। কিন্তু এমন ঘটনায় সেই স্বপ্নগুলো তছনছ হয়, ভেংগে টুকরো হয়ে যায়।

আরও পড়ুন :
শীলতাহানির অভিযোগে যুবককে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত
বিদ্যুতস্পৃষ্টে একজনের মৃত্যু, আহত ১

সাধারণ মানুষ এমন ঘটনা দেখে নিজের সন্তানকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে পাঠাতে ভয় করেন। বিনা কারণে, কোন ধরণের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও মানুষের মুখোশ পড়া শয়তানের হাতে সন্তানের প্রাণ ক্ষয়ের সংশয়ে থাকেন তারা।

আর একজন শিক্ষার্থীর প্রাণও যেন ঝরে না যায় সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অপরাধী যেই হোক তাকে কোনভাবেই যেন ছাড় দেওয়া না হয়। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সুবিধা যেন কোন অপরাধী না পায়।

আবরারের খুনিরা যেন কঠোর শাস্তি পায়। কেউ যেন পার পেয়ে না যায়। অপরাধীকে কেউ ভালোবাসেনা, ঘৃণা করে। যে কারণে তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর কোনই সুযোগ নেই। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে আসামীদের চিহ্নিত করা গেছে এবং এর ভিত্তিতে ইতিমধ্যে অপরাধীদের বেশিরভাগকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

আইনের মাধ্যমে তাদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ। তুচ্ছ কারণে দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন হত্যাকাণ্ড কেউ মানতে পারছেনা। দেশের মানুষ হিসেবে আমি, আপনি কেউই এর দায় এড়াতে পারবোনা।

যে সন্তানকে আপনি জীবনভর লালনপালন করেছেন তার এমন করুণ পরিণতি কীভাবে সহ্য করবেন। আবরারের বাবা-মায়ের চোখের জলে ঝরেনি জল এমন কেউ নেই। ভারী হয়েছে আকাশ, বাতাস।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ করতে হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের ভূমিকাই প্রধান। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষই শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। পাশাপাশি সরকার ও প্রশাসনকে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।

অপকর্মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আবরারের মতো যেন আর কোন শিক্ষার্থীর তরতাজা প্রাণ কেউ কেড়ে নিতে না পারে। এই খুনের এমন বিচার আমরা চাই যেন আর কোন নৃশংস ঘটনা ঘটাবার সাহস কেউ না পায়। দেশের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য এর কোন বিকল্প নেই।

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

অক্টোবর ০৯, ২০১৯ at ১৯:৪২:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসআরএস/আজা