নিজের ‘ডাক্তারি’ নিজেই করে প্রাণ হারালেন ডেঙ্গু আক্রান্ত যুবক

এবার নিজের ‘ডাক্তারি’ নিজেই করে প্রাণ হারালেন ডেঙ্গু আক্রান্ত এক যুবক। তার নাম শামীম বিশ্বাস (২৭)। তিনি গত ৬ দিন আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে যাননি। নিজেই নিজের ‘ডাক্তারি’ করেন। আর এই অসচেতনতার ফল হয়ে দাঁড়াল অত্যন্ত ভয়ানক। অবশেষে তিনি ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রামে। এ নিয়ে গত প্রায় এক মাসের ব্যবধানে এ উপজেলায় ডেঙ্গুতে দুই কলেজছাত্রসহ চারজনের মৃত্যু হলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের ঝাউদিয়া গ্রামের রফিকুল বিশ্বাসের ছেলে শামীম বিশ্বাস গত ৩০ সেপ্টেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হন। সাধারণ জ্বর ভেবে হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে তিনি নিজেই নিজের ‘ডাক্তারি’ শুরু করেন। ইচ্ছা মতো নিতে থাকেন জ্বরের চিকিৎসা। খেতে থাকেন জ্বরের ওষুধ। এরপর তিনদিনেও জ্বর না কমায় এন্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করেন।

এতেও শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় শেষমেষ গত শুক্রবার পরিবারের লোকজন তাকে দৌলতপুর দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। রক্ত পরীক্ষা করা হলে তার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু পরের দিন শনিবার সকালে শামীম বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত শামীম বিশ্বাসকে আশঙ্কজনক অবস্থায় ওইদিন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর রাতে তিনি মারা যান। রোববার দুপুরে নিজ এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ডেঙ্গুর বিষয়ে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য চারদিকে এত এত প্রচার-প্রচারণা চালানো হলেও শুধুমাত্র অসচেতনতা ও অবহেলার জন্য অকালেই ঝরে পড়লো তরতাজা একটি প্রাণ।

এ ছাড়া শামীমের বড় ভাই বেলাল বিশ্বাস (৩০) ও তার পাঁচ বছর বয়সী শিশুপুত্র আকাশ বিশ্বাস ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। শামীমের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর রোববার বিকেলে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপরেই আক্রান্ত পিতাপুত্রকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। বর্তমানে তাদের ওই হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। একই পরিবারের একজনের মৃত্যু ও আরো দুজন আক্রান্ত হওয়ায় ওই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের পাশাপাশি দুশ্চিন্তাও নেমে এসেছে।

এদিকে খবর পেয়ে দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. এজাজ আহমেদ মামুন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া শামীম বিশ্বাসের বাড়িতে যান। সঙ্গে ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজগর আলী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবুসহ এলাকার নেতৃবৃন্দ। এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা শামীমের শোকাহত স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং উপস্থিত লোকজনকে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানান।

দৌলতপুর উপজেলায় এ নিয়ে গত প্রায় এক মাসের মাসের ব্যবধানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই কলেজছাত্রসহ চারজনের মত্যু হলো। এর তিনদিন আগে দৌলতপুর মডেল কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ইমরান আহমেদ (২৫) রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ইমরান উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের হৃদয়পুর গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে।

এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেলে নেয়ার পথে তারেক রহমান (২২) নামে অপর এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। উপজেলার খলিসাকুণ্ডি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের কৃষক মহির উদ্দিনের ছেলে তারেক রহমান খলিসাকুণ্ডি ডিগ্রি কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর একই গ্রামের আসাদুজ্জামান মণ্ডলের স্ত্রী জোসনা খাতুন (৫৫) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।