৭ টাকায় পুজোর বাজার

শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। এখন তাই অন্য সবার মত খোকা-খুকিদের সময় নতুন জামা পরে মণ্ডপে ঘুরে দেবী দর্শনের। তবে পূজার জামা বলে কথা, সেটি কি আর যেনম তেমন হলে চলে!

মণ্ডপে ঘুরতে চাই লাল টুকটুকে নতুন জামা-পাঞ্জাবি। তবে শহরের নামি-দামি সব দোকানগুলোতে সেসব নতুন পোশাকের মূল্য অনেক। ফলে তা সাধ্যের বাইরেই থেকে যায় অনেক শিশুর।

আর সেজন্যই রাজধানীর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ‘৭ টাকায় পুজোর বাজার’ শীর্ষক এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে বিজয়া দশমী অর্থাৎ ৮ অক্টোবর পর্যন্ত।

প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই স্টল। ১ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রায় এক হাজার নতুন জামা নিয়ে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। আর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জন পথশিশু এখান থেকে কিনছে নতুন জামা। তবে একটি শিশু একটি পোশাক কেনার সুযোগ পাবে।

সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এর কর্মকর্তারা জানালেন, ফাউন্ডেশনের কয়েকটি উদ্যোগের একটি হলো ‘৭ টাকায় পুজোর বাজার’। ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন: ‘এক টাকায় আহার’, ‘এক টাকার চিকিৎসা’ ও ‘পাঁচ টাকায় স্যানিটারি প্যাড’ নামের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে অলাভজনক এ সংগঠনটি।

শুভেচ্ছা মূল্য হিসেবে এই টাকা নেওয়া হয়, যেন ক্রেতার মনে কোনো হীনম্মন্যতা তৈরি না হয়। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন ব্যক্তির অনুদানের অর্থে পরিচালিত হয় এসব কর্মসূচি। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ।

এই বাজারের প্রতিটি কাপড়ের মূল্য মাত্র সাত টাকা। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য রমনা কালী মন্দিরের পাশে নতুন চালু করা এই দোকানটি খোলা থাকবে বিজয়া দশমী (মঙ্গলবার-৮ অক্টোবর) পর্যন্ত, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত অবধি।

আরো পড়ুন:
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে র‍্যাব সহযোগী প্রতিষ্ঠান লিড নয় -বেনজীর আহমেদ
৭ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় পণ্য আটক করেছে বিজিবি

‘৭ টাকায় পূজোর বাজার’ বলা হলেও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সুবিধাবঞ্চিত সব শিশু নতুন পোশাক কিনতে পারবে এখান থেকে। এখানকার পোশাকের মধ্যে রয়েছে শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও ফ্রগ। সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে পূজার আনন্দ ভাগ করে নিতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

স্টলে কথা হয় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক সুলতানা জান্নাতের। ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যের ঊর্ধ্বে গিয়েই কাজটি করা বলে এসময় জানান তিনি।

জান্নাত বলেন, আমাদের এই কাজে ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নেই। চ্যারিটিকে আমরা ভিন্ন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছি। সমাজের অসহায় মানুষকে ভিক্ষুকের লাইনেই দাঁড় করিয়ে ত্রাণ দেওয়ার রীতি আমরা পরিবর্তন করতে চেয়েছি।

এ স্টল থেকে মাত্র ৭ টাকায় নতুন কাপড় কিনতে পারছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা তিনি বলেন, ঈদ-পূজায় কোটি টাকার কাপড় দিতে চান অনেকেই, কিন্তু সমস্যা বাধে বিতরণে। বিশৃঙ্খলা এবং ধাক্কাধাক্কিতে কোনোমতে একটা কাপড় নিয়েই ঘরে ফেরেন গ্রহীতারা।

এতে না মেলে সাইজ, না হয় রঙের পছন্দ। দানের তৃপ্তি দাতারা পেলেও দানের কার্যকারিতা তেমন থাকে না, বরঞ্চ গ্রহীতার ভাগে জোটে এক ধরনের হীনমন্যতা এবং অসহায়ত্ব। আমরা চাই, সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা নিজের পছন্দেই কাপড় বাছাই করে নিয়ে যাক তার পছন্দের সময়ে। আর সেটি নামমাত্র মূল্য দিয়ে হলেও তাকে কিনে নিতে হবে, ভিক্ষার অনুভূতি না আসার জন্য।

‘৭ টাকায় পূজোর বাজার’ থেকে লাল টুকটুকে জামা কিনে ভীষণ আনন্দিত টিএসসিতে থাকা ১২ বছর বয়সী শরীফ। কথা হলে সে বলে, দোকানেতো অনেক দাম। এখানে সাত টাকায় নতুন জামা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। বন্ধুরা মিলে নতুন জামা পরে আমরা পূজা দেখতে যাবো।

ফুল বিক্রি করা ১১ বছর বয়সী আবির এসেছিল পাঞ্জাবি কিনতে। নতুন পাঞ্জাবিটা বেশ, সঙ্গে সঙ্গেই পরে নেয় আবির। কথা হলে বলে, সারাদিন ফুল বিক্রি করে মাকে টাকা দিয়েছি আর এই সাত টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম একটা নতুন জামা কেনার জন্য। নিজের টাকা দিয়ে নতুন পাঞ্জাবি কিনতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগছে।

প্রাথমিকভাবে মাত্র একটি স্টলে এই উদ্যোগ শুরু করলেও আরো বেশ কিছু স্টল দেওয়ার ইচ্ছা আছে বলে জানিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। আর এ উদ্যোগে সকবার সহযোগিতাও প্রত্যাশা তাদের।

বিদ্যানন্দ একটি শিক্ষা সহায়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ‘৭ টাকায় পূজোর বাজার’, এর আগে ‘৫ টাকায় বাসন্তী স্যানিটারি প্যাডে’, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ‘এক টাকায় আহার’ এবং ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘বিক্রেতাবিহীন স্টল’ নিয়ে হাজির হয়েছিল বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

অক্টোবর ০৪, ২০১৯ at ১৬:১৯:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/জুবা/এএএম