গবাদিপশু আর নিজেদের আশ্রয় নিয়ে মহাবিপাকে বানভাসিরা

রাজশাহী শহরের পদ্মা নদীর ওপারে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের খিদিরপুরের এলাকার বাসিন্দাদের ঘরই ডুবে গেছে, গরু রাখবেন কোথায়? আবার এই দূর্যোগে অর্ধেক দামেও কেউ কিনতে চাচ্ছেন না গবাদি পশু।

দীর্ঘশ্বাস এখন রাজশাহী মহানগরীর জিয়ানগর, শ্রীরামপুর, পঁঞ্চবটি, জাহাজঘাট, পবার খানপুর, চর মাঝারদিয়াড়, চর খিদিরপুর, চারঘাটের রাউথা, ইউসুফপুর, সাহাপুর, গোদাগাড়ীর ভাটোপাড়া ডাক বাংলো, চর আষাড়িয়াদহ, বাঘার গড়গড়ি ইউনিয়নের চকরাজাপুর, পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর, চারঘাটের রাওথা ইউনিয়ন, ইউসুফপুর, সাহাপুরসহ এলাকার হাজারো বন্যাকবলিত মানুষ।

ওই অঞ্চলের কয়েক হাজার বানভাসি মানুষ এখন নিজেরাই আশ্রয় খুঁজছেন, গরু-ছাগল রাখবেন কোথায় আর তা কিনবেন কে? সাতটি গরু ও তিনটি ছাগল নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন চল্লিশউর্ধ আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালু। চলতি মাসে এগুলো বিক্রি করে হাতে ভালো টাকা আসলেই স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে সোনার হার ও কানের দুল (গহনা) বানিয়ে দিতেন। কিন্তু চলতি বন্যায় তার সব আশা শেষ। এখন থাকবেন কোথায় সেই ভাবনা নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।

রাজশাহী নগরীর মতিহার থানাধিন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন মিজানের মোড় সাতবাড়িয়া বাজে কাজলা ফুলতল মোড় হয়ে বিনোদপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানের দুই পাশেসহ কয়েকটি স্থানের নদীর তিরবর্তী এলাকায় অনেকের সঙ্গে সাতবাড়িয়া এলাকায় উঠেছেন খানপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন (৫১)। সঙ্গে স্ত্রী সাবিয়া বেগম (৪৭), এক ছেলে রবিউল (৩২) ও ছেলের স্ত্রী সেলিনা (২৬) এবং তাদের আব্দুল্লাহ ও মাবিয়া নামে দুই সন্তানের সঙ্গে চারটি গরু।

আরও পড়ুন:
ককটেল বিস্ফোরণে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত
হেরোইনসহ চিহ্নিত নারী মাদক ব্যবসায়ী আটক

বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) দুপুরে বানভাসি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, দুইবার নদী তিরবর্তী এলাকায় বোনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা। নিজেরা বৃষ্টিতে ভিজলেও গরুগুলো যেন না ভেজে সে জন্য পলিথিন দিয়ে তাঁবু খাটিয়েছেন তিনি। প্রতিটি গরু বিক্রি করে প্রায় ২৫-৩৫ হাজার টাকা পাওয়ার আশা ছিল তার। এখন বিক্রিও করতে পারছি না, আবার খাওয়াতেও পারছি না, বন্যায়ই সব খড় নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তোফাজ্জল। এখন ভরসা খাবার কিনে খাওয়ানোর। সে সামর্থ্যও নেই। না খেতে পেয়ে গরুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, দুশ্চিন্তা যেন তাড়ে তাড়া করছেন।

তার মতো আরও একাধিক কৃষকরা বলেন, তারা গরু-ছাগল লালন পালন করেছেন স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যে। এখন না পারছেন গরু বিক্রি করতে, না পারছেন রাখতে। চোরের ভয়ে রাত জেগে গরু পাহারাও দিতে হচ্ছে। অনেকটায় খোলা আকাশের নিচে এখন গবাদি পশুর সঙ্গে মিলেমিশে বাস আরও অনেকের।

বন্যায় সব তৃণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে পশুখাদ্যের তীব্র সংকট। বানভাসি মানুষ কিছু ত্রাণ পেলেও পশু-পাখির জন্য এর কিছুই জুটছে না। ভুক্তভোগীরা গবাদিপশুর জন্য ত্রাণের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে পবার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করছেন চরের মানুষ। এবারও নদীর ভাঙনে এলাকার প্রায় শতশত বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তবে আমরা বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি বলেও জানান চয়ারম্যান বাচ্চু।

অক্টোবর ০৩, ২০১৯ at ২১:৩০:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এমআর/কেএ