ক্যাসিনোকাণ্ডে আটকদের স্বীকারোক্তিতে আতঙ্কে বিএনপি

ক্যাসিনোকাণ্ডে আটকদের স্বীকারোক্তিতে বিএনপির অনেকের নাম উঠে আসায় এখন ভেতরে ভেতরে আতঙ্কে রয়েছেন দলটির নেতারা। দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতায় না থাকলেও বিএনপির কোনো কোনো নেতা ক্যাসিনো-ক্লাবগুলো থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশে ক্যাসিনোর গোড়াপত্তনও হয়েছে বিএনপি নেতাদের হাত ধরেই, এমন অভিযোগও আছে। পাশাপাশি সরকার ক্যাসিনোর অজুহাতে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিএনপি নেতাদের জড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি যতই উড়িয়ে দিক না কেন, বিএনপির অনেক নেতাই এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা হঠাৎ করেই বিএনপির নাম জড়াচ্ছেন তা নয়। এর নেপথ্যে অবশ্যই কিছু রয়েছে। কারণ, সব দুর্বৃত্তায়ন ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চেহারা বদলে ফেলে। অর্থ ও ক্ষমতার কাছে সব গডফাদারের চেহারা একই।

সূত্র জানিয়েছে, বাইরে প্রকাশ না করলেও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতারা ইতোমধ্যেই নিজেদের অপরাধের প্রমাণ সরিয়ে ফেলতে শুরু করছেন। তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্যাসিনোতে সরকারের জারিজুরি সব ফাঁস হয়ে গেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের নেতারা বলছেন, যারা ক্যাসিনো চালাতেন তারা নাকি প্রতি মাসে তারেক রহমানকে এক কোটি টাকা পাঠাতেন।

আরো পড়ুন:
মুন্টু ডাক্তার একটি নাম নয়, ইতিহাস
লাউড় রাজ্যের রাজধানীর পুরাকীতি ও প্রত্নতত্ত্বস্থলটি সরকারি তালিকাভুক্ত

তারা তো গত ১১ বছর ধরে ক্ষমতায়। তারা কি বসে বসে আঙুল চুষছিলেন? মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, আপনি ঘর থেকে শুরু করেছেন শুদ্ধি অভিযান। আশা করছি অভিযানে রাঘববোয়ালরা ধরা খাবেন।

সূত্র জানায়, ক্যাসিনো সম্পৃক্ততায় যাদের আটক করা হয়েছে তাদের দেয়া তথ্য থেকে বিএনপির একাধিক নেতার নাম উঠে এসেছে। যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, টেন্ডার মাফিয়া জি কে শামীম ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন।

লোকমান ও জি কে শামীমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, দেশে প্রথম ক্যাসিনো আইডিয়া আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাধ্যমে। তথ্যমতে, বিএনপির আমলেই ঢাকায় ক্যাসিনো কারবারের গোড়াপত্তন।

শামীম জানান, এ কারবারের পথপ্রদর্শক মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকাসহ বিএনপির কয়েকজন নেতার মাধ্যমে ক্যাসিনো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মির্জা আব্বাসের তত্ত্বাবধানে শামীমের টেন্ডার রাজত্ব চলত। গণপূর্তমন্ত্রী থাকাকালেই আব্বাসের মাধ্যমে শামীমের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। মোটা কমিশন দিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে কাজ বাগিয়ে নিতে থাকেন তিনি।

এ ছাড়া মতিঝিল পাড়া নিয়ন্ত্রণ করতেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও তার ভাই মির্জা খোকন। তাদের নির্দেশে তিনি মতিঝিল এলাকার ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো কারবারের পাশাপাশি জুয়ার আসর চালাতেন। প্রমাণ হিসেবে শামীমের অফিস থেকে উদ্ধার করা একটি খাতায় আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খানকে নিয়মিত অর্থ দেয়ার বিষয়টি রয়েছে। এই টাকার অঙ্কটা কোটি টাকার কাছাকাছি। জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকার সময় জি কে শামীম ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদক ছিলেন।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান হোসেন ভূঁইয়া জানান, ক্যাসিনো থেকে যে আয় করা সম্ভব, এ ধারণা প্রথম তিনি পান তারেক রহমানের কাছ থেকে। বিএনপির আমলে এ নিয়ে তার সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। এরপর ২০১৬ সালেও তিনি লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেন। তখন তারেক রহমান তাকে ক্যাসিনো কারবার চালিয়ে যেতে বলেন।

সেই অনুযায়ী তিনি প্রথমে মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো কারবার শুরু করেন। প্রতি মাসে তারেক রহমানকে ১ কোটি টাকা করে পাঠাতেন তিনি। এ ছাড়া ক্যাসিনোর টাকা দিয়েই বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ তথ্যও রয়েছে গোয়োন্দের কাছে।

নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে খালেদা জিয়ার মাথার উপর ছাতা ধরে আছেন লোকমান হোসেন এমন একটি ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

এ ছাড়া ক্যাসিনোর গডফাদার হিসেবে নাম এসেছে যুবদল নেতা সাইফুল আলম নীবরসহ স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতার। এসব তথ্য নিখুঁতভাবে যাচাই করছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

ক্যাসিনোতে বিএনপির নেতাদেরও ছাড় দেয়া হবে না এমনটা জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জি কে শামীম যাদের টাকা দিত, তাদের নামের তালিকায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খানের নামও রয়েছে।

মদ-জুয়া চালু করেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। আপনাদের নেতা তারেক রহমান দুর্নীতির বরপুত্র। আপনাদের মধ্যে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ছাড়া তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন ক্যাসিনো চালু হয়। মির্জা আব্বাস, মোসাদ্দেক আলী ফালু, সাদেক হোসেন খোকারা ক্যাসিনো চালু করেছিল। যারা ক্যাসিনো পরিচালনা করছে ও যারা চালু করেছিল, তারা কেউ-ই দায় এড়াতে পারবে না।

অক্টোবর ০২, ২০১৯ at ১১:৫৭:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/এএএম