চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন খালেদা জিয়া

জামিন পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন খালেদা জিয়া। সোমবার (১ অক্টোবর) বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সাথে বিএনপি দলীয় তিন সাংসদ সাক্ষাৎ করে আসার পর সাংবাদিকদের কাছে নেত্রীর শারীরিক অবস্থান তুলে ধরে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সাংসদ হারুনুর রশীদ। মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) বাকি ৪ সংসদ সদস্যও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানান তিনি।

হারুনুর রশীদ বলেন, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার যে সমস্ত অসুখ-বিসুখ রয়েছে এগুলোর জন্য উনার অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দরকার। এটার জন্যে বিদেশে তার চিকিৎসার দরকার, যে অসুখে উনি জর্জরিত যেগুলোর জন্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরকার বিশেষায়িত হাসপাতালে। আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাব, বাস্তবিকই উনার জামিন পাওয়ার যে নৈতিক অধিকার এই জামিনের অধিকার থেকে তাকে যেন বঞ্চিত করা না হয়।

উনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, উনি চিকিৎসার সুযোগ পেলে তো অবশ্যই বিদেশ যাবেন। উনি আজকে জামিন পেলে কালকেই বিদেশ যাবেন এবং উনি যদি আজকে জামিন পায় প্রথম অগ্রাধিকার হবে উনার চিকিৎসা।

তাহলে কালকেই দেখা যাবে যে, উনি ভিসার জন্য বাইরে যাবেন। যেরকম তার শারীরিক কনডিশন তার চিকিৎসা বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেই। আজকে ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) অসুস্থ্য হয়েছেন তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজকে তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কেনো এই চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এটা সারাদেশের মানুষ জানতে চায়।

বিকাল সাড়ে ৪টায় একাদশ সংসদের তিন সাংসদ ব্রাক্ষনবাড়ীয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাই নবাবগঞ্জ-২ আসনে হারুনুর রশীদ ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ আমিনুল ইসলাম বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে ৬ তলায় যান যেখানে একটি কেবিনে খালেদা জিয়া রয়েছেন। প্রায় ঘন্টাব্যাপী সেখানে অবস্থান করেন বিএনপির এই ৩ সংসাদ। তিন সাংসদ নেত্রীর জন্য ফুলের তোড়া ও ফল-মুলের একটি ঝুড়ি নিয়ে যান।

হারুনুর রশীদ বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান খুবই দেখার খুব বেদনাদায়ক। এটি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। উনি চরম অসুস্থ্য এবং উনার হাত দিয়ে নিজের খাওয়াটাও নিজে খেতে পারে না, নিজের কাপড়াও নিজে পড়তে পারে না। এই অবস্থায় উনাকে বন্দি রাখা-এটা কত বড় অমানবিক। উনি শুধু দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আমাদের চোখে আমরা পানি ধরে রাখতে পারি নাই।

অশ্রুসজল কন্ঠে হারুন বলেন, উনি হাত সোজা করতে পারেন না কাঁপে। পোষাকটাও উনার সাথে যারা আছে তাদের পরিয়ে দিতে হয়, নিজের পরিমান মতো খাওয়াটাও নিজে খেতে পারেন না। তিনি বলেন, সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করব দেশে তথাকথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের মধ্য দিয়ে, ক্যাসিনোর অভিযানের মধ্য দিয়ে আজকে যে চিত্রে বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে, আজ সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রীকে সামান্য ২ কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে জামিন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। এটি কত বড় অন্যায় জুলুম।

সাংগঠনিক বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি সংগঠনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমরা বলেছি গত এক মাসে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশগুলো হয়েছে সরকারের বাঁধা-বিপত্তির পরেও। লক্ষ লক্ষ লোক ওইসব সমাবেশে যোগদান করেছে। উনি বলেছেন, তোমরা সবাইকে নিয়ে দেখে-শুনে এক সাথে থাকো। দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসলে মানুষ যেন মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে, তাদের ভোটাধিকার ফিরে পায় সেজন্য কাজ করো।

সংসদে যোগদান নিয়ে দলের ভেতরে বিভক্তি থাকলেও আপনারা আপনাদের নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি সামনে রেখেই সংসদে গেছেন- এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি বা কোনো বার্তা নিয়ে আপনারা এসেছেনকিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সংসদে যোগদান করার পরে সংসদে আমরা যে কজন কথা বলার চেষ্টা করেছি তার মধ্যে নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি অন্যতম ছিলো। আমি দল নেতা হিসেবে ইতিমধ্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দুই্-এক জায়গায় কথাও বলেছি, তার মুক্তির দাবিও জানিয়েছি।

এই ব্যাপারে উনারা দেখা যাক, এটা আইনি ব্যাপার এসব বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি বার বার বলেছি যে, আজকেও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে জানাচ্ছি, উনার জামিনের যে অধিকার, সেই অধিকার থেকে উনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যত দ্রুত সরকার জামিন দেবে আমি মনে করি, এটা আইনের শাসনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সরকারের তরফ থেকে প্যারেলের কোনো প্রস্তাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ধরনের কোনো প্রস্তাবনা নেই। প্যারেলের বিষয়টা আসবে কেনো? উনি তো জামিন পাওয়ার যোগ্য।