পেঁয়াজ কারসাজির নেপথ্যে আমদানিকারকরা

যেন গর্জনের আগেই বর্ষণ। ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। একদিনের ব্যবধানে রাজধানীতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।

দেশি বা ভারতীয় বাজারে সব পেঁয়াজের ঝাঁজই এখন প্রায় এক। এতে সাধারণ ক্রেতাদের টালমাটাল অবস্থা। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।

জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৪ লাখ টন। উৎপাদন হচ্ছে ২৩ লাখ টন। কিন্তু ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ফলে বছরে ঘাটতি থাকে ৮ থেকে ৯ লাখ টন।

এই ঘাটতি মোকাবেলায় বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। আমদানিকারকরা ৩-৪ বছর পর সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করেন।

আরও পড়ুন :
হাসপাতালগুলোতে সাপে কাটা রোগীর জন্য ইনজেকশন রাখার দাবীতে মানববন্ধন
৬৮ বারের মতো পেছালো সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত

এ বছর বৃষ্টিতে আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত ও বাজারে সরবরাহের সময় পিছিয়েছে। ক্রেতাদের একটি বড় অংশের অভিমত, সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ক্রেতাদের। রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ-রসুন আড়তদার সমিতির প্রচার সম্পাদক ও মেসার্স আলহাজ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে প্রাথমিকভাবে চাহিদা ২৮ লাখ টন।

সেখানে উৎপাদন হয় মাত্র ২১-২২ লাখ টন। ঘাটতি যা আছে তা বাংলাদেশ নির্ণয় করতে না পারলেও ভারতের ব্যবসায়ীরা তা নির্ণয় করতে পারে।

ঠিক এই সময়ে ওরা পেয়াজ দেয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিল। অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে ২২ থেকে ২৬ দিন সময় লাগে। আবার দামও পড়ে অনেক। এ জন্য ভারতের ওপরেই বেশি নির্ভরশীল।

গত ১৪ তারিখ ভারত সরকার দাম প্রায় তিনগুণ বাড়ানোর কারণে একদিনের ব্যবধানে ৩০-৩৫ টাকা কেজির পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়।

ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচার হলো ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ সংবাদ প্রচারের পর গত রবিবার পাইকারী ও আমদানিকারকরা ৭০ টাকার নিচে পেঁয়াজ বেচতে নিষেধ করে।

পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল বাংলাদেশ। তাই ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কিনছেন। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়তদাররা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় পেঁয়াজের ওপরও।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। আমদানিও হচ্ছে। তারপরও হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রধান করে দশটি টিম গঠন করা হয়েছে। মনিটরিং টিমগুলো পেঁয়াজের উৎপাদনস্থল পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করবে।

তিনি জানান, এতদিন টিসিবির ১৬টি ট্রাক রাজধানীতে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। মঙ্গলবার থেকে বাড়িয়ে ৩৫টি ট্রাকে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হবে। ট্রাকগুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।

বাণিজ্য সচিব আরো বলেন, সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখে ভারত সরকারের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়।

মিয়ানমার থেকে দুটি জাহাজ পেঁয়াজ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁচছে। একটি জাহাজ থেকে গত রবিবার বিকেলেই পেঁয়াজ খালাস শুরু হয়েছে।

দেশ দর্পণে আরও পড়ুন :
ইবির ফোকলোর বিভাগের নতুন সভাপতি ড. মোস্তাফিজ
৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি, বন্যার আশঙ্কা!

আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই তা খুচরা বাজারে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজও পাইপলাইনে রয়েছে। পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে একটা স্থায়ী সমাধানে যাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

খুচরা বিক্রেতারা যে পরিমাণ পেঁয়াজ চাইছেন, তা তারা পাচ্ছেন না। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের এটা অপকৌশল। সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকারের উচিত এসব নিয়ন্ত্রণহীন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা।

তিনি বলেন, আমরা প্রায় প্রতি বছরই পেঁয়াজ সংকটে থাকি। এ জন্য দেশের উৎপাদনও বাড়াতে হবে। কৃষকদের কাছে উৎপাদনশীল বীজ সরবরাহ করতে হবে।

পাশাপাশি ঋণ ও সারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি ও ঋণ সহায়তা দিতে হবে। পেঁয়াজের মৌসুমে যেন দাম কমে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

দেশি পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করলে চাল, গরুতে যেমন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, পেঁয়াজেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারব।

অক্টোবর ০১, ২০১৯ at ১৯:৫৫:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/আজা