পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলে ফসলহানির শঙ্কা!

হঠাৎ করেই পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নাটোরের লালপুর উপজেলার নওসারা সুলতানপুর, দিয়াড়শঙ্করপুর, চাকলা বিনোদপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর, বাকনাই, বন্দোবস্তগোবিন্দপুর ও লালপুর চরের প্রায় ১৬৭ বিঘা জমিতে চাষকরা শীতকালীন আগাম সবজি ক্ষেতসহ প্রায় এক হাজার একর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চর এলাকার কৃষকরা ।

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, গত কয়েকদিনে পদ্মানদীর পানি বৃদ্ধিতে জেগে উঠা ৭টি চরের মোট ২২.২৫ হেক্টর জমিতে আগাম চাষ করা মূলা, পুইশাক, লালশাক, বেগুন, লাউ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এছাড়াও চরের প্রায় ৫৫০ হেক্টর আখ ক্ষেতে পানি প্রবেশ করেছে।

রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের আকস্মিক পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার পদ্মায় জেগে উঠা ৭টি চরে আগাম সবজি ক্ষেত গুলি তলিয়ে গেছে এছাড়াও আখ ক্ষেত গুলিতেও প্রবেশ করেছে পানি। এছাড়াও পদ্মা চরের বেশ কিছু বাড়ি ঘরেও পানি উঠেছে।

এসময় কথা হয় বিলমাড়িয়া এলাকার মূলা চাষী জুয়েল আলীর সঙ্গে তিনি বলেন, ‘পদ্মার পানিতে তার ৪ বিঘা জমির মূলা তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’ ঐ এলাকার মূলা চাষী রফিকুল ও সেকেন্দার বলেন, ‘অনেক টাকা খরচ করে তার ৪ বিঘা জমিতে আগাম মূলা চাষ করেছিলাম, পদ্মার পানিতে সব নষ্ট হয়েগেছে এখন পরিবার নিয়ে বিপদে আছি।’

নওসারা সুলতানপুরের কৃষক আবজাল জানান, ‘পদ্মার পনি তার ২৭ বিঘা আখের জমিতে ঢুকেছে, পানি দ্রুত নেমে না গেলে সুগার মিলে আখ দেওয়া যাবেনা।’

আরও পড়ুন:
জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত
গ্রেফতার খালেদ তবুও থেমে নেই চাঁদাবাজি

বিলমাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘এখানকার ৫-৭ টি চরে আবাদ করেই এই এলাকার মানুষেরা তাদের জীবনজিবিকা নির্বাহ করে থাকে। পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে জমি গুলি তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।’

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চর এলাকার কৃষকরা এবছর আগাম শীতকালীন ফসল চাষ করায় গত ৫-৭দিনে পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে প্রায় ২২.২৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত তলিয়ে সবজি নষ্ট হয়েছে। তবে কিছু আখ ক্ষেতে পানি ডুকলেও পানি নেমে গেলে তা স্বাভিক হয়ে যাবে এছাড়াও পানি নেমে যাওয়ার পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সঠিক ভাবে বলা যাবে বলে তিনি জানান।’

লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, ‘পদ্মার আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে চর এলাকার ২২.২৫ হেক্টর জমির শীতকালিন সবজি ক্ষতি হয়েছে। সব সময় খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে আশ্রয় কেন্দ্র খুলে তাদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারী সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করছি।’

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী আল আসাদ জানান, ‘ভারতের ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ার কারনে এবং উজানে অতিবৃষ্টিতে হঠাৎ করেই পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১৭দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদ সীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ৩ নভেম্বর পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে।’

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯ at ১৭:৩৪:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এআর/কেএ