নতুন গজিয়ে ওঠা মাদ্রাসায়, কোটি টাকা বাণিজ্য

তিন মাস আগেও ছিল খোলা মাঠ। এর মধ্যে কয়েকদিনের মধ্যে মাটি ফেলা। তারপর তড়িঘড়ি করে মাটি শুকানোর আগেই টিনের বেড়া দিয়ে টিনসেট ঘর। মাঝ খান দিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে ভাগ ভাগ করে কক্ষ তৈরি করা।

মোট ৫/৭টি কক্ষ। তারপর প্রতিটি ঘরে একটি করে ব্লাকবোর্ড, একটি চেয়ার একটি টেবিল এবং কয়েকটি বেঞ্চ। ভিন্নতা একটি কক্ষে। সেখানে একটি টেবিল, ৫টি চেয়ার এবং একটি আলমারী।

এ কক্ষে একটি ব্যানার আছে। ব্যানারটি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এবং ওই ব্যানারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।

নিচে লেখা আছে রূপদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, ডাক: রুদ্রপুর সদর, যশোর। যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল বাজার থেকে রুদ্রপুর মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের যাওয়ার পথে বাম পাশে রাস্তার পাশে রূপদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে একটি সাইনবোর্ড দেখে ভিতরে ঢুকলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এ দৃশ্য চোখে পড়ায় ভিতরে গিয়ে একটি কক্ষে দুইজন লোক বসে আছে। আর খালী গায়ে তিনটি শিশু খেলা করছে।

আরও পড়ুন :
বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে ১৩ হাজার ৩৭৫ শিশু
সখিনা গার্লস স্কুলে বনিফেসের বৃক্ষরোপন

ওই দুজনের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই নিজেকে ইবতেদায়ী প্রধান শহর আলী পরিচয় দেন। বাকীজন বাইজুর রহমান ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক।

শহর আলী জানান, এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বতর্মান স্থানে কয়েকমাস আগে জমি কিনে এখানে মাটি ফেলে মাদ্রাসা আবার চালু করা হয়েছে। রূপদিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠেই স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার কার্যক্রম চলে প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর।

সম্প্রতি এ মাদ্রাসা নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হলেও পূর্বেও কাগজপত্র দিয়ে এ মাদ্রাসা শুরু হয়েছে। ৩৩ শতকের এ জমিটি সহকারি শিক্ষক বাইজুর রহমানসহ তার ভাই হাফিজুর রহমান, বোন নাসিমা বেগমের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে।

সাত বছর আগেই শহর আলী ইবতেদায়ী প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। একই সময় বাইজুর রহমানসহ তিনজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই সময় তিনি সবে মাত্র কেশবপুর মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেছেন।

মাদ্রাসায় কোন ছেলে মেয়ে নেই কেন এবং জাতীয় পতাকা টাঙ্গানো কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক সংরক্ষিত ছুটি। ছুটির দিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা এবং বিগত বছরের পরীক্ষার ফলাফলসহ অন্যান্য কাগজপত্র আছে কি না জানতে চাইলে তা বাসায় আছে দাবি করেন। মাদ্রাসার কাগজপত্র বাসায় কেন থাকে সে ব্যাপারে কোন সদুত্তর মেলেনি।

পরিচালনা কমিটিতে কোন অভিভাবক নেই কেন সে ব্যাপারে কোন উত্তর দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি জানান, এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রূপদিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারি নুরুন্নবী সবই জানেন এবং কাজগুলো তিনিই করেন।

পরবর্তীতে আবার জানান, মোবাইল নম্বর দেয়া নিষেধ আছে। স্থানীয় আব্দুল্লাহ নামে এক যুবক জানান, রূপদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পর এমপিওভুক্তি না হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায় কয়েক বছরের মধ্যে।

ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ড ও জেলা শিক্ষা অফিস থেকে অনুমোদন লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলেও সরকারের কিছু দফতরে প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে যায়। চলতি বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশের সকল ইবতেদায়ী মাদ্রাসা সরকারি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

দেশ দর্পণে আরও পড়ুন :
আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
যবিপ্রবিতে ভর্তিচ্ছুদের জন্য বিশেষ বাণী

এ ঘোষণার পর থেকে রূপদিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারি সুচতুর নুরুন্নবী রাতারাতি এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে তিনজনকে ব্যাক ডেটে নিয়োগ এবং বাকী দুইজনকে কয়েক মাস আগে নিয়োগ দেখিয়েছে নুরুন্নবী।

আর এজন্য ওই ৫জনের কাছ থেকে অর্ধকোটি হাতিয়ে নিয়ে ওই টিনের ঘর করেছেন। একই সাথে সরকারের বিভিন্ন দফতরে টাকা দিয়ে কাগজপত্র ঠিক করেছেন এবং পার্শবর্তী গোয়ালদহ-কল্যাণদহ মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থী এনে অডিট করিয়েছেন।

তাতে খরচ হয়েছে আদায়কৃত অর্থের অর্ধেক। বাকী টাকা তিনি হজম করার চেষ্টা করছেন। ইবতেদায়ী মাদ্রাসা সরকারি করার ঘোষণার পর এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান ইবতেদায়ী প্রধান শহর আলী।

প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও রূপদিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারি নুরুন্নবীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ ছিল। পরে তার প্রতিষ্ঠানে গেলে সেখানেও পাওয়া যায়নি।

সাড়াপোল বাজারের দোকানদার সাহেব আলী জানান, মাদ্রাসায় সাংবাদিকরা এসেছেন তা জানতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন নুরুন্নবী স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন এমপিও শিক্ষক- কর্মচারী ফেডারেশনের জেলা কমিটির সহ সভাপতি জামিল আহমেদ জানান, যারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন মিছিল মিটিং করছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়েও শিক্ষাদান করছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান গুলো এমপিও করার জন্য লিস্ট জমা দেয়া হয়েছে।

ভুইফোঁড় এসব প্রতিষ্ঠান এমপিও যাতে না হয় সে ব্যাপারে শিক্ষা সচিবের কাছে অচিরেই তালিকা দেয়া হবে। এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলার সহকাটি শিক্ষা অফিসার মুমতাহিনা জানান, কয়েকমাস এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯ at ২০:১৫:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/জেএ/আজা