প্রেমিককে নির্যাতনের পর মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কুলতলা গ্রামের রাস্তা থেকে প্রেমিককে ডেকে নিয়ে আটকিয়ে নির্যাতনের পর একটি মহলের মোটা অংকের টাকার দাবী পুরণ না হওয়ায় প্রেমিককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংঘটিত হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের রাঙিয়ারপোতা মাঝপাড়ার প্রেমিক আকরাম হোসেনের(২২) পিতা আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার ছেলে জীবননগরের দেহাটির কনটেক মিলের একজন শ্রমিক। কুলতলা গ্রামের আবুল কাশেম আমাদের পুর্ব পরিচিত। তার একটি বোন আমাদের গ্রামে বিয়ে হয়েছে সেই হিসাবে দুসম্পর্কের আত্মীয়। কাশেমের মেয়ে সোনিয়া(১৫) আমাদের গ্রামে তার ফুফু বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে আমার ছেলের সাথে পরিচয় হয় বলে জানি।

সেই পরিচয়ের সুত্র ধরে কাশেমের স্ত্রী ও মেয়ে তাদের বাড়ীতে আমার ছেলেকে বেড়াতে যেতে বলে এবং ১২ সেপ্টেম্বর আমার ছেলে আকরাম হোসেন বিকালে কুলতলা গ্রামে সোনিয়াদের বাড়ীতে যায়। সেখানে নাস্তা-পানি খাওয়ার পর সন্ধ্যার আগে বাড়ীতে ফিরে আসার সময় কুলতলা গ্রামে রাস্তায় গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করা কালে কুলতলা গ্রামে মোতালেবের বাড়ীর পার্শ্বে ওই গ্রামের আবুল বিশ্বাসের ছেলে তরিকুল, আব্দুস সালামের ছেলে সাইফুল, আবু কালামের ছেলে জুয়েল, রশিদের ছেলে রহমত, শাহাজানের ছেলে মফিজুল, বাবলুর ছেলে সবুর, পলাশ ও আমির হোসেনের ছেলে হাকিনুর আমার ছেলেকে আটকিয়ে তারা মারপিট করে। মফিজুল ও তরিকুল প্রথমে আমার ছেলেকে রাস্তায় আটকায় বলে জানতে পেরেছি। এক পর্যায়ে তরিকুল আমাদের নিকট ৩০ হাজার টাকা দাবী করে এবং টাকা দিতে না পারলে আমার ছেলে আকরামের হাত-পা গুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তরিকুল আমার ছেলেকে মাঠের ভিতর নিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে টাকার দাবী করে।

এ অবস্থায় আমি অবস্থা বেগতিক মনে করে জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ মধ্যরাতে আমার ছেলে আকরাম ও সোনিয়াকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। বিষয়টি আপস-নিস্পত্তির প্রস্তাব দিলে পরের দিন সকালে সোনিয়ার মামা মফিজুল আমার নিকট ৮০ হাজার টাকা দাবী করেন। কিন্তু টাকা দাবী দিতে না পারায় আমার ছেলের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করেন। আমি একটি ছবি দেখেছি যেখানে আমার ছেলে ও সোনিয়ার বাবাকে টাকার জন্য একটি গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে।

সন্তোষপুর গ্রামের যুবক সম্রাট বলেন, কুলতলা গ্রামের যুবলীগ নেতা তরিকুল মোবাইল ফোন দিয়ে জানায় আকরামকে ছাড়িয়ে নিতে হলে তাদেরকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে, নইলে হাত-পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হবে। আমি টাকার ব্যাপারটি আকরামের বাবাকে বলি। আমরা কুলতলা গ্রামে রাতে গিয়ে দেখি যে, আকরামকে তরিকুল ও তার সহযোগীরা তাকে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। সোনিয়া প্রথমে কিছু হয়নি বলে দাবী করলেও পরবর্তীতে থানায় পুলিশের নিকট জানায় আকরাম তার গায়ে হাত দিয়েছে।

আরও পড়ুন:
৩৪৮ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক-২
ইলিশমাছ ভারতে পাচারের সময় গ্রেফতার-২

সরজমিনে কুলতলা গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি জানান, আকরামকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরবর্তীতে অভিযোগ তোলা হয়। সোনিয়ার সাথে তার প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক আছে। সেই কারণে তরিকুল-মফিজুলরা তাকে আটকিয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুধু আকরামকে নয়, সোনিয়ার বাবাকেও গাছের সাথে বাঁধা হয়েছিল। পরে অনেক রাতে পুলিশ আকরাম ও সোনিয়াকে নিয়ে থানায় চলে যান।

সোনিয়ার ফুফু তানজিনা বেগম বলেন, আমার ভাই আবুল কাশেমের বাড়ীতে লোকজন গেলেই তরিকুল ও তার লোকজন ঝামেলা করে থাকে। ইতিপুর্বে আমার ভাইয়ের বাড়ীতে লোকজন যাওয়ার অপরাধে তরিকুল তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করে টাকা-পয়সা আদায় করে। তরিকুল গ্রামে মানুষকে ফাঁদে ফেলে হয়রানি করে থাকে।

অভিযুক্ত তরিকুল তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে আটকাইনি। আকরাম আটকানোর ঘটনা আমি মোবাইল ফোনে জানতে পেরে সেখানে যাই এবং আকরামকে পার্শ্ববর্তী ফাঁকা স্থানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরে আমি তাকে সোনিয়ার মামা মফিজুলদের হাতে তুলে দিই। ৩০ হাজার টাকা দাবী করার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আকরাম ও সোনিয়া তাদের সাথে অল্পদিনের প্রেমের কথা স্বীকার করে। তবে তাদের মধ্যে কোন দৈহিক সম্পর্ক হয়নি বলে জানায়।

এ ব্যাপারে সোনিয়ার পরিবারের দাবী ঘটনার সময় সোনিয়া তাদের বাড়ীতে ছিল। রাস্তা থেকে তরিকুল, মফিজুলসহ অন্যরা আকরামকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে ও সোনিয়ার বাবাকে একটি গাছে বেঁধে নির্যাতনও করা হয়। তরিকুল ঘটনার এক পর্যায়ে আকরামকে ফাঁকা মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়।

ঘটনার ব্যাপারে আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার মফিজুল ইসলাম মাফি বলেন, ঘটনার ব্যাপারটি সোনিয়ার পিতা আমাকে বলেছে। আমি শুনেছি আকরামকে তরিকুলসহ তার সহযোগীরা রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর নাহিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক ভাবে ঘটনা সত্য বলে প্রতীয়মান হলেও। বর্তমানে ঘটনার নেপথ্যে অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে। আকরামকে রাস্তা থেকে তরিকুলসহ অন্যরা ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠলেও ঘটনার ব্যাপারে আরো তদন্ত প্রয়োজন। আমি যতটুকু তদন্ত করিছি তাতে জানা গেছে, তরিকুলসহ এলাকার বেশ কিছু যুবক আসামী আকরামকে বেঁধে রেখেছিল। পুলিশ খবর পেয়ে তাকে ও সোনিয়াকে উদ্ধার করেন।

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯ at ১৭:২২:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/টিআর/কেএ