গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

যশোরের শার্শায় ঘুষ না পেয়ে আসামির স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আসামি আব্দুল লতিফ আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন হুসাইনের আদালতে আসামি স্বীকারোক্তি দেয়। মামলার তদন্তকারী ইন্সপেক্টর শেখ মোনায়েম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইন্সপেক্টর শেখ মোনায়েম হোসেন বলেন, শার্শায় গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতার তিন আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

বুধবার আসামি আব্দুল লতিফকে আদালতের হাজির করা হয়। সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়। বৃহস্পতিবার অন্য দুই আসামি কামরুজ্জামান ওরফে কামারুল ও আব্দুল কাদেরকে আদালতে হাজির করা হবে।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন হুসাইন প্রথম দফায় তিন আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

১১ সেপ্টেম্বর তাদের রিমান্ড শেষ হয়। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ফের তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করলে ১৭ সেপ্টেম্বর আদালত আসামিদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য, যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর এলাকায় গত ২ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন এক গৃহবধূ।

তার অভিযোগ, স্থানীয় গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই খায়রুল আলম ও তার সোর্স কামরুজ্জামান ওরফে কামারুল তাকে ধর্ষণ করে।

এ ছাড়া, লতিফ ও কাদের নামে আরও দুজন তখন ঘরের বাইরে অবস্থান করছিল। এর আগে গত ২৫ আগস্ট ওই নারীর স্বামীকে পুলিশ আটক করে।

পরে ভিকটিম অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই খায়রুল আলম। টাকা না দেওয়ায় তাকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল দিয়ে চালান দেওয়া হয়।

২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে এস আই খায়রুল, সোর্স কামারুলসহ চার জন ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে আবারও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।

আরও পড়ুন:
প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজিতের উপর হামলা
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা

টাকা না দেওয়ায় এস আই খায়রুল ও কামারুল তাকে ধর্ষণ করে বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন। ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওই গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

ডাক্তারি পরীক্ষার জন্যে সেদিন বিকালেই আলামত সংগ্রহ করেন ডাক্তাররা।

এদিকে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় জেলা পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ধর্ষণের এই ঘটনায় ওই গৃহবধূ ৩ সেপ্টেম্বর রাতে শার্শা থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় এস আই খায়রুলের নাম রাখা হয়নি।

বাদী ওই গৃহবধূ পরে সাংবাদিকদের জানান, ভয়ে তিনি পুলিশের নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি। মামলায় আসামি করা হয় শার্শার চটকাপোতা এলাকার কামরুজ্জামান ওরফে কামারুল, লক্ষণপুর এলাকার আব্দুল লতিফ ও আব্দুল কাদেরকে। একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়।

৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন ইন্সপেক্টর শেখ মোনায়েম হোসেন।

দায়িত্ব পেয়েই তিনি নির্যাতিত ওই গৃহবধূ ও মামলার বাদীর বাড়ি পরিদর্শন ও জবানবন্দি গ্রহণ করেন। ৭ সেপ্টেম্বর ভিকটিমের সোয়াপ কালেকশন করে ডিএনএ প্রোফাইলের জন্যে সিআইডি হেড কোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়।

একইসঙ্গে মামলার আসামিদের ডিএনএ পরীক্ষারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এইদিন রাতেই শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমানকে বদলি করে যশোর পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়।

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯ at ১৩:০৫:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/লোস/এএএম