দুই জেলার বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে প্রায় দেড় মাস ধরে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে দুই জেলার বাস মালিক- শ্রমিকরা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে অন্যদিকে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যাবে এবং শ্রমিকরা তাদের নায্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার মালিক সমিতির দাবি একটা মেহেরপুরের বাস ও একটি চুয়াডাঙ্গার বাস টিপ মারবে। চুয়াডাঙ্গার মালিক সমিতির দাবি এক ঘন্টা তাদের বাস চলবে এবং পরের ঘন্টা মেহেরপুরের বাস চলবে। এছাড়া মেহেরপুর পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে চুয়াডাঙ্গা মালিকরা অপরাগতা প্রকাশ করাও বাস চলাচলের অন্যতম কারণ।
এই সকল দ্বন্দ নিয়ে দেড় মাস ধরে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ আছে। মেহেরপুরের শেষ সিমানা দরবেশপুর পর্যন্ত মেহেরপুরের মালিকানাধীন বাস গুলো যাচ্ছে। অপরদিকে দরবেশপুরের শেষ থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত চলছে চুয়াডাঙ্গার মালিকানাধীন বাস। এ রেশারেশির জেরে ভোগান্তিতে আছে সাধারণ যাত্রিরা।
মেহেরপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে কয়েকজন যাত্রী জানান, আমাদের প্রতিদিন চাকুরি ও ব্যবসার জন্য চুয়াডাঙ্গা আসা যাওয়া করতে হয়। কিন্তু বাস মালিকদের দ্বন্দ্বে আমরা সরাসরি আমাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারিনা। এতে আমাদের সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।
মেহেরপুরের বাস চালক মিন্টু, বাবু, চাঁদ আলী, মন্টু জানান, দুই জেলার মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। ঠিকমত যাত্রি পাওয়া যাচ্ছে না। বাস চালানোর তেল খরচ তোলায় মুশকিল হয়ে পড়েছে। এই সমস্যার সমাধান যদি না হয় তবে অল্প দিনেই। বাস সার্ভিস ধসে পড়বে। শ্রমিক ও যাত্রিদের কথা ভেবে দুই জেলার নেতারা দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করবে এটাই প্রত্যাশা করে সাধারণ যাত্রীরা।
মেহেরপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, দুই জেলার মলিক পক্ষের দুই রকম দাবি। মেহেরপুরের বাস মলিক সমিতির দাবি মেহেরপুর এবং চুয়াডাঙ্গার একটি একটি করে বাস চলাচল করবে। চুয়াডাঙ্গার দাবি সময় নির্ধারণ করা হবে সে অনুযায়ি বাস চলাচল করবে। কেউ কারও দাবি মেনে নিতে পারছে না ।
এই দ্বন্দ্ব চলছে প্রায় দেড় মাস ধরে। মেহেরপুরের বাস মেহেরপুরের বাইরে যাচ্ছে না এবং চুয়াডাঙ্গার বাস মেহেরপুরে আসছে না। এতে শ্রমিকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে এবং সাধারণ যাত্রিরা পড়েছে বিপাকে। এ নিয়ে কয়েকবার সমাধান করার জন্য বসার কথা থাকলেও কোন পক্ষই বিষয়টি নিয়ে বসেনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি সালাউদ্দিন বলেন, দুই জেলার বাস চলাচল বন্ধ আছে এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা কয়েকবার মেহেরপুরের বাস মালিক সমিতির সাথে কথা বলেছি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের সাথে আলোচনার জন্য বলেছি। কিন্তু তারা আমাদের কথায় রাজি না হয়ে নিজেদের মত বাস চালাচ্ছে। এদিকে আমাদের শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতি হচ্ছে বলে তারা বাস চালাবে না বলে জানিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের কোন রকমে বুঝিয়ে তাদের বাস চালানোর জন্য বলা হচ্ছে। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে শ্রমিকরা বাস বন্ধ করে ধর্মঘট করতে পারে। আমরা নিজেরা অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি কোন সমাধানে আনতে পারিনি। যাত্রী-শ্রমিক ও দুই জেলার সম্পর্কের কথা ভেবে আমরা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি যেন খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
পুলিশের জন-নিরাপত্তামূলক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি
মেহেরপুর জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বলেন, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়র চিঠি দিয়েছিল নতুন বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়া এবং সেখানে বাস রাখার জন্য। ওই চিঠি আমরা চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতিকে জানিয়েছিলাম, তারা টার্মিনালে বাস রাখতে অপরাগতা প্রকাশ করে।
তিনি আরো বলেন, তাদের দাবি এক ঘন্টা তাদের বাস চালাবে পরের ঘন্টা আমাদের বাস চালাতে হবে। এতে আমরা যাত্রী পাচ্ছিলাম না। যে কারণে পুরাতন নিয়মে একটা তাদের একটা আমাদের বাস চলাচলে সিদ্ধান্ত জানাই । তারা আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে তাদের বাস দরবেশপুর পর্যন্ত বাস চালায়। আমরাও বাধ্য হয়ে দরবেশপুর পর্যন্ত বাস চালাচ্ছি।
এ বিষয়ে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি বলেন, দুই জেলার বাস মালিকদের দ্বন্দে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা বাস চলাচল বন্ধের খবর পেয়ে দুই জেলা বাস মালিক সমিতির ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করার।
সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯ at ২১:২৫:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/টিআর/কেএ