আর কত বয়স হলে ভাতা পাবে ভূরুঙ্গামারীর জহুরা বেওয়া

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন ৯৭ বছরের বৃদ্ধা জহুরা বেওয়া। কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর শক্তি নেই তাঁর শরীরে। কানেও ঠিকমত শুনতে পাননা তিনি। উবু হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি। স্বামী আরফান আলী মারা গেছেন প্রায় ত্রিশ বছর আগে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের সাদা মুন্সির কুঠি গ্রামের বাসিন্দা চার সন্তানের জননী জহুরা বেওয়ার জন্ম ১৯২২ সালে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে জহির উদ্দিন দিনমজুর। পরিবার নিয়ে আলাদা থাকেন। ছোট ছেলে মহির উদ্দিনের সংসারে কখনো খান আবার কখনো একাই আলাদা রান্না করে খান জহুরা বেওয়া।

মানুষের সহায়তায় মানবেতর জীবনযাপন করা এই বৃদ্ধার বয়স একশ পূরণ হতে চললেও তাঁর ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। তবে ভাতা কার্ডের জন্য দিনের পর দিন স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আশ্বাস পেয়েছেন ঠিকই। অভিযোগ উঠেছে টাকা দিতে না পারায় তাঁকে ভাতা কার্ড প্রদান করা হয়নি।

জহুরা বেওয়ার সাথে কথা বলতে তাঁর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তাঁকে ভাতা কার্ড না দেয়ায় প্রতিবেশীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। জহুরা বেওয়ার নাতি আঃ মালেক জানান, ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য দাদীর ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিয়েছেন, কি করেছেন না করেছেন তাঁরাই ভালো জানেন? তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্ড পাইনি।

বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতা পান কিনা জানতে চাইলে বৃদ্ধা জহুরা বেওয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাক বিদুয়া কার্ড দিবো! ভাতার ওয়ালাগো দিবো’ (আমাকে বিধবা ভাতার কার্ড দেবে! যাদের স্বামী আছে তাদেরকে দেবে)।

আরও পড়ুন :
ভুয়া কাজী মাহবুবুর রহমানের অভিনব প্রতারনা
কাস্টমারের লাথিতে মোবাইল দোকানদারের ভাইয়ের মৃত্যু !

জহুরা বেওয়া কেনো এতদিনেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি আর কবেই বা পাবেন এই প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্টরাই ভালো জানেন? ওই এলাকার অনেকেরই প্রশ্ন আর কত বয়স হলে জহুরা বেওয়া ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন?

ইউপি সদস্য আকতার জানান, বরাদ্দ কম থাকায় তাঁকে এবার ভাতা কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হয়নি, পরবর্তীতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

আন্ধারীঝার ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহাম্মেদ খোকনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ না করে অন্য মানুষকে কার্ডের কথা বললে তাঁরা কি দিতে পারবে?

টাকার বিনিময়ে কার্ড প্রদানের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ার আগেই ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জামাল হোসেন জহুরা বেওয়ার ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে জমা দিতে বলেন এবং প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।

সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯ at ১১:৫৯:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এজিএল/এএএম