‘ভয়ভীতির’ কারণে উদ্ধতর্ন কর্মকর্তাদের সামনে এসআই খায়রুলের নাম বলেনি ক্ষতিগ্রস্থ গৃহবধু

ঘুষ না পেয়ে ‘আসামির’ স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ‘ভয়ভীতির’ কারণে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে এসআই খায়রুলের নাম বলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন যশোরের শার্শার ক্ষতিগ্রস্থ সেই গৃহবধূ। তিনি এসআই খায়রুল আলমসহ সব আসামির দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

ইতিমধ্যে এ মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরের আদেশে মামলাটি যশোর পিবিআই গ্রহণ করেছে। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হলেও একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ওই অজ্ঞাত আসামি-ই এসআই খায়রুল নাকি অন্য কেউ তা নিয়ে তোলপাড় চলছে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় নির্যাতিত গৃহবধূর বাড়ি পরিদর্শন করেছে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারা ধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

ওই গৃহবধূ এদিন সকালে তার বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি খায়রুলকে খুব ভালো করেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৮ হাজার, ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছে। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ যখন খায়রুলকে আমার সামনে নিয়ে এসেছিল এবং জিজ্ঞেস করছিল- ইনি ছিলেন কি না। তখন আমি বিবেচনা করে দেখলাম, সে তো পুলিশের লোক। তার সঙ্গে আমি ক্ষমতায় পারবো না। তাছাড়া সে আমাকে চোখের ইশারায় নিষেধ করছিল।’’

আরও পড়ুন :
অভিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত
রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীলতা করার চেষ্টা, মোহাম্মদ নাসিম এমপি

ঘটনার সময় এসআই খায়রুল উপস্থিত ছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জ্বী, রিপোর্টে (মেডিক্যাল টেস্ট) তো প্রমাণ আসবে, তখন তো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা সব বলবে। কারণ তারা আরও ভাল জানে।’’

উল্লেখ্য, এর আগে পুলিশ দাবি করেছিল, এসআই খায়রুল আলমকে নির্যাতিতার সামনে উপস্থিত করা হলে তিনি তাকে চিনতে পারেননি। তাই এসআই খায়রুল আলমকে বাদ দিয়ে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমান বলেন, ‘‘ওই গৃহবধূ সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনেই এসআই খায়রুল সম্পর্কে তার বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাকে কোনো প্রকার ভয়ভীতি বা চাপ দেওয়া হয়নি।’’

তাহলে এখন কেন তিনি ভয়ের কথা বলছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘‘হয়তো কেউ তাকে দিয়ে এখন এসব বলাচ্ছে। হয়তো কেউ ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব করাচ্ছে।’’

এদিকে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ও ফোরামের জেলা নেতৃবৃন্দ ওই নারীর বাড়িতে যান। তার নারীর খোঁজ খবর নেন এবং আইনগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

পরে নিপুণ রায় চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারী আকার নিয়েছে। এখানে ৯ মাসের শিশু থেকে বৃদ্ধারাও নিরাপদ নেই। কেউ ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। এই মহামারী থেকে দেশকে মুক্ত করতেই নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষ্মণপুর এলাকায় দুই সস্তানের জননী এক গৃহবধূ (৩০) পুলিশের এসআই খায়রুল আলম ও সোর্স কামরুজ্জামান ওরফে কামারুল কর্তৃক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ করা হয়। গত ২৫ আগস্ট ওই নারীর স্বামী, যিনি একসময় চোরাচালানের পণ্য বহন করতেন তাকে পুলিশ আটক করে। সেইসময় তাকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ৫০ হাজার দাবি করেন গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই খায়রুল আলম। টাকা না দেওয়ায় তাকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল দিয়ে চালান দেওয়া হয়।

ওইদিন রাতেই এসআই খায়রুল, সোর্স কামারুলসহ চারজন ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে আবারও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই খায়রুল ও কামারুল তাকে ধর্ষণ করেন বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন।

পরদিন সকালে ওই গৃহবধূ যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করাতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরীক্ষার জন্যে সেদিন বিকেলে আলামত সংগ্রহ করেন চিকিৎসকরা।
এদিকে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় জেলা পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ধর্ষণের এই ঘটনায় ওই গৃহবধূ ৩ সেপ্টেম্বর রাতে শার্শা থানায় একটি মামলা (মামলা নম্বর-০৪/০৩.০৯.১৯) করেন। মামলায় এসআই খায়রুলের নাম রাখা হয়নি। আসামি করা হয় শার্শার চটকাপোতা এলাকার কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল, লক্ষ্মণপুর এলাকার আব্দুল লতিফ এবং আব্দুল কাদেরকে এবং একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ জানিয়েছিলেন, মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে, অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন।

সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯ at ২০:৩১:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এইচএম/আজা