কুটির শিল্পের নিপূণ কারিগর

আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক কুটির শিল্প। প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি গ্রামীণ জীবন জীবিকায় কুলা, ডালি, ডুলি, ঝাড়, শিকে, নাকরী, ঘুটনি, হাতপাখা, ঘোরপা, কৃষকের ঝাপি, পিটুয়া, ধারাই, সেমতি, কবুতরের খোপ, হাঁস মুরগীর খোয়ারা, জেলেদের মাছ ধরার টেপাই, ডারকি, চ্যাচলা, বানা, যাকোই, ঠুসি, খলাই ইত্যাদির অবদান অনেক।

শিল্পীর হাতের কারুকাজে পাকা বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় দৃষ্টিনন্দন ও বাংলার গ্রামীণ জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্য। আধুনিক যান্ত্রিক যুগেও এ শিল্প টিকে আছে শিল্পীদের নিরলস পরিশ্রম আর সংগ্রামী মনোভাবের কারণে। এমনই একজন সংগ্রামী মানুষ কান্তেশ্বর বর্মণ (৫৫)।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের সেনের খামার গ্রামে তার বসবাস। দুই ছেলে এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার। জীবিকার তাগিদে ২০ বছর আগে তিনি বেছে নেন এই পেশা। এতে যা আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চলতো না। অভাবের কারণে একসময় বন্ধ হয়ে যায় ছেলে মেয়ের লেখাপড়া। তাই উপার্জন বাড়াতে ছেলে আর স্ত্রীকেও যুক্ত করেন এ কাজে।

পরিবারের সকলে মিলে তারা বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন নিত্য প্রায়োজনীয় এসব পণ্য। এগুলো বিক্রির দায়িত্ব ছোট ছেলে শ্রীকান্ত বর্মলের কাঁধে। শ্রীকান্ত বর্মণ জানান, প্রতি হাটে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এসব পণ্য কিনে নেয়। পাইকারদের মধ্যে রয়েছে ফুলবাড়ীর ছাইফুর, গংগারহাটের দুলাল, বুলু মিয়া, নেওয়াশী বাজারের মজিবর, আমজাদ, গাগলা বাজারের রতন রায়, কচাকাঁটার ফুলো মিয়া, কাঁঠালবাড়ীর মুকুল।

আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীলতা করার চেষ্টা, মোহাম্মদ নাসিম এমপির
সরকারী জমি দখল করে অবৈধ ভাবে বাড়ী নির্মানের অভিযোগ

শ্রীকান্ত আরও জানান, হাট ও পাইকারদের চাহিদা পূরণের জন্য নিজেদের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি বগুড়ার মহাজন, উলিপুরের মাইদুল, মনু মিয়া, যাত্রাপুরের আজিজার, আতি মিয়া, দুর্গাপুরের হাকিম ও নাগেশ্বরীর সুজনের কাছ থেকে তৈরি পণ্য ক্রয় করেন তারা। আয় ব্যয়ের কথা জানতে চাইলে শ্রীকান্ত জানায়, প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। আর পণ্য তৈরি ও আমদানীতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। মাস শেষে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা রোজগার হয়।

এই রোজগারে সংসারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান তিনি। এছাড়া আর্থিক সংকটের কারণে বারবার অল্প অল্প করে পণ্য আমদানী করায় পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এ কারণে লাভ হয় অনেক কম। পর্যাপ্ত পুঁজি থাকলে তাদের আয় অনেক বেড়ে যেত।

কান্তেশ্বর বর্মণ জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্বপরিবারে এ পেশায় যুক্ত থাকায় তারা অন্য কোন কাজ জানেন না। তাই শত কষ্টেও এ পেশাকেই আঁকড়ে ধরে আছেন। তিনি তাদের কুটির শিল্পের এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯ at ২০:০৫:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এজিএল/কেএ