শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে পাঠ্যদানে বিঘ্ন: ক্ষোভ প্রকাশ

যশোর চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী সরকারি শাহাদাৎ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে।

মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টম্বর) বিষয়টি নিয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। এদিকে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদান বিঘিন্ন হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমানের সাথে প্রতিষ্ঠানের সকল সহকারী শিক্ষকের দ্বন্দ্ব এখন চরমে পৌঁছেছে। ঘটনাটি নিরসনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম পর্যন্ত গড়িয়েছে।

নির্বাহী অফিসার বিষয়টি সুন্দরভাবে নিরসনে দায়িত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পালের ওপর। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে উভয়পরে উপস্থিতিতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় তা হয়নি। নোটিশের মাধ্যমে সকলকে ডেকে কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় শিক্ষকের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন:
বাবার সাথে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে মেয়ে নিহত!
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ৯ম ব্যাচের র‌্যাগ ডে অনুষ্ঠিত

একাধিক সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০ মাসের পিএফ এর টাকা বকেয়া আছে। যার পরিমান প্রায় ৮ লাখ টাকা। এই টাকার জন্য শিক্ষকরা প্রায়ই প্রধান শিক্ষকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে গত ৬ জুলাই প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের কথা কাটাকাটি হয়। সেই থেকে প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

এরই মধ্যে গত ১৯ আগস্ট প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল জলিলকে বিবাদী করে নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ করেন। এরই মাধ্যমে বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধানের লক্ষে নির্বাহী অফিসার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পালের ওপর দায়িত্ব দেন।

কিন্ত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকল শিক্ষকের উপস্থিতিতে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। শিক্ষকরা ওই কর্মকর্তার অফিসে এসে তালা ঝুলতে দেখে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন

বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বকুল হোসেন বলেন, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত নিরসন না হলে এর প্রভাব পড়বে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর। তিনি সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ঘটনাটি নিরসনের দাবি জানান।

প্রতিষ্ঠানের একাধিক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান পরিকল্পিতভাবে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। প্রতিষ্ঠানে ৩০ জন সহকারী শিক্ষক আছেন, তাদের ভাল-মন্দ সবকিছু দেখার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। কিন্তু তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। যে কারণে বিদ্যালয়ে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত দিয়েছি, আশা করছি দ্রুতই একটি সমাধান আসবে’।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, ‘আমি ছুটিতে থাকায় শিক্ষকদের সাথে বসা হয়নি। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকল শিক্ষককে নিয়ে বসা হবে’। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে আগামী সোমবার উভয়ের উপস্থিতিতে আলোচনা সাপেক্ষে একটি সমাধান করা হবে’।

সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯ at ২২:৫৫:৪৫ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এমআই/কেএ