আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণ: এসআই খায়রুলকে চিনতে পারেননি ভিকটিম, কথিত তিন সোর্স আটক

তিন সদস্যসের তদন্ত কমিটি গঠন

যশোরের শার্শায় আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণের সময় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় প্রদানকারী ব্যক্তি গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মোঃ খায়রুল আলম ছিলেন না। ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের কথিত তিন সোর্সকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন। কমিটিকে আগামি তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন যশোরের পুলিশ সুপার। এছাড়া ২৫ আগস্ট হতে ৩০ কার্যদিবস মেয়াদী বিআইসি প্রশিক্ষণে এসআই মোঃ খায়রুল আলমের অবস্থান ঢাকা।

বুধবার এই সকল তথ্য জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ও মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং মূখ্য লিয়াজোঁ অফিসার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার স্বাক্ষরিত এক প্রেসনোট সরবরাহ করা হয়েছে।

আটক অভিযুক্তরা হলো- যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুল কাদের (৪০), আব্দুল মাজেদের ছেলে আব্দুল লতিফ (৫০) ও চটকাপোতা গ্রামের মৃত হামিজ উদ্দিনের ছেলে ভিকটিমের চাচাত দেবর মোঃ কামরুজ্জামান @ কামরুলকে (৪০)।

আরও পড়ুন :
হিমাইতপুরে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১৩২ তম আবির্ভাব তিথি মহোৎসব শুরু
ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

সূত্র জানায়, শার্শার লক্ষ্মণপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান আশাকে গত ২৫ আগস্ট রাতে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে গোড়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই খায়রুল আলম আটক করে। পর দিন ২৬ আগস্ট তাকে আদালতে চালান দেয়া হয়।

এরপর গত মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টম্বর) মাদক মামলার আসামী আশাদুজ্জামান @ আশার স্ত্রী শাহানাজ পারভীন @ হীরা (৩০) যশোরের শার্শা উপজেলার গোড়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খায়রুলসহ কথিত তিন সোর্সের বিরুদ্ধে ধর্ষন ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ করে।

পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই মোঃ খায়রুল আলমকে ভিকটিমের সামনে আনা হলে ভিকটিম বলেছে ধর্ষক ও সহযোগিদের বিদ্যুতের আলোতে দেখেছেন এবং ধর্ষণের সময় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় প্রদানকারী ব্যক্তি এসআই খায়রুল আলম ছিলেন না।

পুলিশ জানায়, এ সংবাদ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ওসি, কোতয়ালী মডেল থানাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করতঃ তার পরিধেয় জামা কাপড় আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। এছাড়া, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনায় উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুল কাদের, আব্দুল মাজেদের ছেলে আব্দুল লতিফ ও চটকাপোতা গ্রামের মৃত হামিজ উদ্দিনের ছেলে ভিকটিমের চাচাত দেবর মোঃ কামরুজ্জামান @ কামরুলসহ অজ্ঞাত একজনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্তের মধ্যে তিনজনকে পুলিশ আটক করেছেন।

পুলিশে দেয়া তথ্যমতে, গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মোঃ খায়রুল আলম গত ২৫ আগস্ট হতে ৩০ কার্যদিবস মেয়াদী বিআইসি প্রশিক্ষণে এসবি ট্রেনিং স্কুল ঢাকায় অবস্থান করছেন। এছাড়া, অন্য কোন পুলিশ সদস্য ঘটনার সময় উক্ত স্থানে গিয়েছিলেন কিনা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অজ্ঞাতনামা পলাতক ব্যক্তি পুলিশ সদস্য কিংবা অন্য যে কেউ হোক তাকে সনাক্তকরণসহ গ্রেফতারের জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এ সংক্রান্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদারকে প্রধান করে নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার, কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সমন্বয়ে ০৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ০৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টম্বর) দুপুরে ভিকটিম যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা করানোর জন্য যায়। এসময় তিনি হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিক ও অন্যান্যদেরকে জানান, সোমবার দিবাগত রাতে গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মোঃ খায়রুল আলমসহ স্থানীয় ০৩ জন অর্থাৎ ০৪ জনের মধ্যে ০২ জন তাকে ধর্ষণ করেছে এবং বাকী ০২ জন ধর্ষণে সহযোগিতা করেছে।

সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯ at ১৯:২৪:৪৫ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/জেএ/আজা