বিএমডিএ কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এক বছরের মধ্যে দফায় দফায় অন্তত একশ’ কর্মচারীকে স্ট্যা- রিলিজ করা, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের, প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মে এবং দুর্নীতির অভিযোগ, কর্মচারীদের দাবি না মানাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কর্তৃপক্ষের সাথে কর্মচারীদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও কর্মচারীদের সংগঠন সিবিএ এখন মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এতে করে যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের মধ্যে তিন দফায় ৯৯ জন কর্মচারীকে স্ট্যা- রিলিজ করেছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এর মধ্যে গত ২৫ আগস্ট বিএমডিএ’র ২৯ জন কর্মচারীকে একসঙ্গে স্ট্যা- রিলিজ করা হয়। এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেন বিএমডিএ’র সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো: আশরাফুল ইসলাম।

স্ট্যা- রিলিজ হওয়া কর্মচারীদের মধ্যে সহকারী হিসাব রক্ষক ৩ জন, সহকারী মেকানিক ৬ জন, মেকানিক ১ জন, ড্রাইভার ৮ জন, গুদাম রক্ষক ৪ জন, প্রধান সহকারী ৩ জন, অফিস সহায়ক ১ জন ও সহকারী কোষাধ্যক্ষ ৩ জন। পৃথক ৮টি অফিস আদেশের মাধ্যমে তাদের স্ট্যা- রিলিজ করা হয়। তারা বিএমডিএ রাজশাহী সদর দফতর এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন জোন অফিসে কর্মরত ছিলেন।

আরও পড়ুন:
পুলিশ কন্সটেবলকে দা দিয়ে কুপিয়ে ছিনতাই
স্কুলছাত্রীকে ঘরে ঢুকে জোর পূর্বক ধর্ষণ, আটক ধর্ষক

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ জন কর্মচারীকে একসঙ্গে স্ট্যা- রিলিজ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন বিএমডিএ’র তৎকালীন সচিব রেজাউল আলম সরকার। তবে পরবর্তীতে সিবিএ’র আবেদনের প্রেক্ষিতে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার হস্তক্ষেপে এই ২২ জন কর্মচারীর স্ট্যা- রিলিজ স্থগিত করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।

সপ্তাখানেক আগে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে স্ট্যা- রিলিজ করা হয় ৪৮ জন কর্মচারীকে। এই স্ট্যা- রিলিজ আদেশে স্বাক্ষর করেন বিএমডিএ’র মনিটরিং অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের (সিবিএ) ৮ দফা দাবি না মানায় এবং এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স বিভাগীয় শ্রম অধিদফতর রাজশাহীর পরিচালক বাদী হয়ে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে রাজশাহী শ্রম আদালতে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছেন। দায়ের করা ফৌজদারী মামলা নং-১১৫/২০১৯। তারিখ-০৭/০৫/২০১৯। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২১০ (৭)/৩০১ ধারার অপরাধের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি-ধামকি দেওয়া, হয়রানি, খারাপ আচরণ করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

কর্মচারীরা বলেন, ইতোপূর্বে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদের অপসারণের দাবিতে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্মচারী লীগের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশও হয়েছে। বরেন্দ্র ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। তারা আরো জানান, দীর্ঘ চার বছর ধরে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুর রশিদ। তাই এত দীর্ঘ সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের বৈধতা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে।

তারা আরো বলেন, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করেছেন রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন্স বিভাগীয় শ্রম অধিদফতর রাজশাহীর পরিচালক। অথচ এই মামলার প্রেক্ষিতে সিবিএ’র ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক।

বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্মচারী লীগের (সিবিএ) সভাপতি মেসবাউল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, এক বছরের মধ্যে তিন দফায় ৯৯ জন কর্মচারীকে একসঙ্গে স্ট্যা- রিলিজ করা হয়। এছাড়া এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে আরো কিছু কর্মচারীকে স্ট্যা- রিলিজ করা হয়। যা খুবই দু:খজনক। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে এসব কর্মচারীকে স্ট্যা- রিলিজ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান ও সিবিএ’কে দুর্বল করতেই এই হটকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে করে সর্বস্তরের কর্মচারীদের মধ্যেক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো: আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি ও শাস্তিমূলক বদলীসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। এছাড়া কেউ কেউ সাসপে- হয়েও আছেন। এ নিয়ে যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেন সিবিএ সভাপতি।

মেসবাউল হক বলেন, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিএমডিএ’তে এখন অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি না মেনে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এতে করে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও সিবিএ মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে এবং প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় সিবিএ কঠোর অবস্থানে যাবে।

এসব ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ নয়া দিগন্তকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কর্মচারীদের স্ট্যা- রিলিজ করা হয়েছে। ফৌজদারী মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, নিয়মের বাইরে গিয়ে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক হলে তা মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু অযৌক্তিক দাবি তো মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া ত্রি-পক্ষীয় চুক্তির কথা বলা হয়েছে। এ ধরণের চুক্তির কোনো নিয়ম নেই। এছাড়া দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন বিএমডিএ’র এই কর্মকর্তা। আর তার বিরুদ্ধে আনীত অন্যান্য অভিযোগেরও কোনো ভিত্তি নেই বলে জানান তিনি।

সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯ at ২২:৪৫:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/মারারা/এএএম