আফগানদের ওপেনিং জুটি বিপদে ফেলতে পারে টাইগারদের

বিসিবি একাদশের বোলিং লাইন আপটা নেহায়েত সাদামাটা। পেসার বা স্পিনার, বাংলাদেশের একজন সামনের সারির বোলারও নেই। অতি সাধারণ এক বোলিং। অনভিজ্ঞ ও অপরিণত এবং নির্বিষ ঐ বোলিং শক্তির বিপক্ষে আফগানরা কেমন ব্যাটিং করেছে, তাদের কোন ব্যাটসম্যান কেমন? কে ভাল কে মন্দ? কার মান ও মেধা কোন পর্যায়ের? তা বিচার করা কঠিন।

তারপরও যারা চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এ ম্যাচের প্রথম দিনটা দেখেছেন, তারা সবাই দুই আফগান ওপেনার এহসানউল্লাহ জানাত আর ইব্রাহীম জাদরানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আরও পড়ুন :
আফ্রিদিকে হেনস্থা করতে গিয়ে নিজেই বিদ্রুপের শিকার গম্ভীর
শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কর্মশালা

সবার একটাই কথা। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আফগান ব্যাটসম্যানদের যে রূপ সবার দেখা ও জানা, টেস্টে একই দলের ওপেনারদের রূপ ভিন্ন।

সবার জানা, একদিনের সীমিত ওভারের ক্রিকেট আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আফগান ব্যাটিং ভীষণ আক্রমণাত্মক। ব্যাটসম্যানরা হাত খুলে খেলতে সিদ্ধহস্ত। পাওয়ার আর পিঞ্চ হিটিং জানেন ভালো। ফ্রি স্ট্রোক প্লে‘ তেও অভ্যস্ত আফগানরা। তারা টেস্টেও অমন মেজাজ আর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করবেন, এমনটাই ভেবে বসে আছেন অনেকে।

তবে প্রস্তুতি ম্যাচ দেখে সেই ধারণা পাল্টাতে বাধ্য। সীমিত ওভারের ফরম্যাটে তেড়ে ফুড়ে ব্যাট চালনা যাদের অভ্যাস এবং বলের মেধা ও গুণ বিচার করে ব্যাট না চালানোর চেয়ে যারা ইচ্ছেমত শটস খেলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেই আফগানদেরই দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে ভিন্ন রূপ।

বিশেষ করে দুই ওপেনার এহসানউল্লাহ জানাত ও ইব্রাহীম জাদরান যেন একদম প্রথাগত টেস্ট ব্যাটসম্যানের প্রতিমূর্তি। কোনোরকম তাড়াহুড়ো নেই। তেড়েফুড়ে আর মেরে খেলা বাদ দিয়ে একেবারে ব্যাকরণ সিদ্ধ ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত দুজন। ধৈর্য্য আর মনোযোগ-মনোসংযোগ ধরে রেখে ঠান্ডা মাথায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলের গতি লক্ষ্য করে খেললেন দুই আফগান ওপেনার।

পেস ও স্পিনের বিপক্ষে সমান স্বচ্ছন্দ্যে খেলে দীর্ঘ তিন ঘন্টা উইকেটে কাটিয়ে দিয়েছেন তারা। তারপরও আউট হননি। ঘুরিয়ে বললে বিসিবি একাদশের বোলাররা তাদের আউট করতে পারেননি। দুজনই রিটায়ার্ট হার্ট হয়েছেন। মানে স্বেচ্ছায় ফিরে গেছেন সাজঘরে। তার আগে প্রথম উইকেটে তুলে দিয়েছেন ১৩১ রান (৪৬.১ ওভারে)। এহসানউল্লাহ জানাত ১৩৭ বলে ৭ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় করেন ৬২। আর ইব্রাহীম জাদরানের ব্যাট থেকে এসেছে ৫২ (১২৪ বলে ৬ বাউন্ডারি)।

দুই ওপেনারের জোড়া অর্ধশতকে প্রথম সেশন পার করে বড়সড় স্কোরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো আফগানিস্তান। দুই ওপেনার নিজে থেকে সাজঘরে ফেরার পর বিসিবি একাদশের অনিয়মিত অফস্পিনার আল আমিন জুনিয়র অল্প সময়ে কয়েকটি উইকেট তুলে নিলে সফরকারিদের মজবুত অবস্থা বদলায়। দিন শেষে আফগানদের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৪২। আল আমিন জুনিয়র দখল করেন ৪ উইকেট (৫১ রানে)।

বিসিবি একাদশের বোলিং শক্তি যেমনই থাকুক, আর যত দুর্বল ও কমজোরিই হোক না কেন, আফগানিস্তানের দুই ওপেনার যেভাবে একদম প্রথা মেনে ঠান্ডা মাথায় দীর্ঘ পরিসরের লাগসই গাণিতিক ব্যাটিং করেন, তখন বুঝতে হবে টেস্টে আফগানরা অত বলগাহীন ব্যাটিং করে না। তাদের ওপেনিং জুটি অনেক সাজানো গোছানো।

ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির মত ‘ধুমধারাক্কা’ ও ‘ইয়াহু মার্কা’ ব্যাটিং তারা করেন না। তাদের আউট করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। টাইগারদের বোলিংটা হতে হবে অনেক ধারালো ও বৈচিত্র্য ভরা।

সেপ্টেম্বর২, ২০১৯ at ০৯:৫৮:২০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/ জানি/ইআ