আশুরার গুরুত্ব তাৎপর্য ও শিক্ষা

ইসলামী জিন্দেগীতে বরকতময় ও ঐতিহাসিক যে দিবসগুলো রয়েছে তার মধ্যে পবিত্র আশুরা হচ্ছে অন্যতম একটি দিবস। আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশরুন’ থেকে উদগত।

ইসলামী সন গণনায় মহররম মর্যাদাবান একটি মাস। মহররম শব্দের অর্থ নিষিদ্ধ বা পবিত্র। এ মাসসহ আরো ৩টি মাস আছে যে মাসগুলোতে ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহ করা নিষিদ্ধ। এরকম নিষিদ্ধ কর্মকান্ড থেকে এ মাসটি পাক-পবিত্র বলে এ মাসকে মহররম বা পাক পবিত্র মাস বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন :
নিজেই তৈরি করুন ভেজিটেবল বিফ স্যুপ
সন্তানের পরীক্ষা ভীতি কাটানোর উপায়

এ মাসে স্বয়ং রাসূল (সা.) নিজেও কোনো ধর্মযুদ্ধও করেননি। এমনকি ইসলাম পূর্ব যুগেও এ মাসে শান্তি বিরাজ করত। মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ-এ চারটি মাসকে আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষেধ করে পরম সম্মানিত ও পবিত্র বলে আল কোরআনে উল্লেখ করেছেন।

এরশাদ হয়েছে ‘তোমরা জেনে রেখ, এই চারটি মাস বড় ফজিলত ও বরকতপূর্ণ। তোমরা এই মাসগুলোতে পাপাচার করে নিজেদের ওপর জুলুম করো না’ (সূরা: তাওবা, আয়াত: ৩৬-৩৭)

স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায়, এসব মাসে নেক আমল করলে সওয়াব অনেক বেশি হবে এবং উল্লেখিত চার মাসের মধ্যে মহররমের ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম।

এ দিনে ঘটে যাওয়া কিছু ঐতিহাসীক কিছু ঘটনা:
পবিত্র আশুরা মুসলিম ঐতিহ্যে বড়ই বরকতপূর্ণ ও নানাভাবে অবিস্মরণীয়। ইসলামপূর্ব যুগেও এ দিনকে খুব মর্যাদা সহকারে পালন করা হত। সৃষ্টির শুরু থেকে এ দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। কোরআন, হাদিস ও ঐতিহাসিকদের কাছ থেকে যা জানা যায়, তা হলো-

পবিত্র আশুরার দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা সাগর, পাহাড়, প্রাণিকূল, আসমান-জমিন ও লওহ-কলম সৃষ্টি করেছেন। আবার এদিনেই আরশে আজীমে সমাসীন হয়েছেন। তামাম মাখলুকাত ধ্বংসও হবে মহররমের দশ তারিখে। আল্লাহ পরওয়ারদেগার এ দিনে আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-কে তার খলিফা নিযুক্ত করেছেন আর জান্নাতে দাখিল ও পৃথিবীতে নির্বাসনের পর মক্কায়ে মুয়াজ্জমার আরাফাত ময়দানে হজরত ‘মা’ হাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন ও দীর্ঘ দিন ক্ষমা প্রার্থনা শেষে দু’জনের তাওবা কবুল করেন। পৃথিবীর প্রথম হত্যাকান্ড হাবিল কাবিলের ঘটনাও এদিনে সংঘটিত হয়। হজরত নূহ (আ.) সদলবলে মহা প্লাবন শেষে যুদী পাহাড়ে অবতরণ করে পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলেন এ দিনে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ক্ষমতাশালী মূর্তিপূজারী নমরুদের অগ্নিকান্ড থেকে উদ্ধার হন এ দিনে, হজরত আইয়ুব (আ.) কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তি পান এ দিনে, হজরত ইউনুছ (আ.) মাছের পেট থেকে পরিত্রাণ এবং ফেরাউনের স্ত্রী হজরত আছিয়া (আ.) শিশুপুত্র মুসা (আ.)-কে এ দিনই ফেরত পান। আল্লাহ পাক এ দিনে হজরত ইদ্রিস (আ.)-কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর পর গুনাহ-অপরাধের জন্য কান্নাকাটি করলে আবার তাকে জান্নাতে ফেরত নেন। এ দিনই হজরত দাউদ (আ.) এর গুনাহ মাফ হয়, কুমারী মাতা বিবি মরিয়ম (আ.) এর গর্ভ হতে হজরত ঈসা (আ.)’র পৃথিবীতে আগমন ঘটে। এ ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে এ দিনে।

আশুরার রোজার ফজিলত:
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং রমজান মাসের রোজার প্রতি। (বুখারি)

রোজা রাখার নিয়ম:
ইসলামের দৃষ্টিতে আশূরা উপলক্ষে দু’টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখা মাকরূহ। এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাল্লাহ! বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে।

আশুরার দিনে কিছু করনীয় কাজ:
সম্ভব হলে উক্ত দিনে যারা রোজা রাখবে তাদের এক বা একাধিকজনকে ইফতার করানো। সাধ্যমত দান-সাদাকাহ করা। গরিবদেরকে পানাহার করানো। ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো ও তাদের ও সহযোগীতায় পাশে এসে দাঁড়ানো।

সেপ্টেম্বর২, ২০১৯ at ০৮:০২:৫৬(GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/ জুবা/ইআ