অপহরণ করে বিয়ের অভিযোগ, মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি

যশোরের চৌগাছা ছারা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণের পর ঝিনাইদহে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

তিব্বত হোসেন নামে এক ঘটক ও মোহন নামের এক যুবক এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেই অভিযোগ করেছেন মেয়েটির পরিবার।

পরে মেয়েটির পরিবার চৌগাছা থানায় অভিযোগ দিলে শনিবার রাতে মেয়েটিকে মোহনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

মেয়েটি অসুস্থ্য থাকায় শনিবার রাতেই তাকে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাতেই মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা না নিয়ে পারিবারিকভাবে মিটিয়ে ফেলতে পরামর্শ দেয় বলে অভিযোগ করেছেন মেয়েটির পিতা।

তবে রবিবার দুপুরে চৌগাছা থানার এএসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ওই মেয়েটির পরিবারকে থানায় এসে মামলা করার জন্য বলা হয়েছে। মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এ রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত মেয়েটির অভিভাবকরা এখন থানায় ছিলেন।

মেয়েটির পিতা আক্ষেপ করে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। দিন মজুরের কাজের উপর সংসার চলে। চৌগাছা বাজারের একটি পাড়ায় বসবাস করি। ২৮ আগস্ট আমরা বাড়িতে কেউ ছিলাম না। এসময় আমার মেয়ে বাড়ির বাইরে বের হলে ঘটক তিব্বত ও তার এক ভায়রা কোনভাবে মেয়েটিকে অপহরণ করে ।

তিনি বলেন, এর আগের দিন ওই ঘটক আমাকে মোহন নামে এক ব্যক্তির সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করে। আমি তাকে বলি, “আমার মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে, এখনো ছোট। তাকে আমি বিয়ে দেব না”।

এ নিয়ে ঘটকের সাথে আমার কথাকাটাকাটি হয়। তখন তিব্বত ‘তোমার মেয়েকে নিয়ে যেতে আমার পাঁচ টাকার ভাজা খারচ হবে’ বলে আমাকে হুমকি দেয়।

মেয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় একটি গাড়িতে করে ঝিনাইদহ নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। গাড়ির মধ্যে তার জ্ঞান ফিরলে তার হাত-মুখ চেপে ধরেন দুজন। মেয়েটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালের ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে নির্দেশ দেন।

কিন্তু ওই ঘটক ও তার ভায়রা মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে এসে কোন একটি কাজী অফিসে নিয়ে চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের কিসমতখানপুর গ্রামের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে মোহন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে দেয়।

মোহনের আগের দুই স্ত্রীর একজন অসুস্থ, অন্যজন আত্মহত্যা করে মারা যায়। বিয়ের পর মোহন মেয়েটিকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার আদমপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, আমরা থানায় অভিযোগ দেয়ার পরও পুলিশ আসামিদের আটক করেনি। পরে শনিবার রাতে উপজেলার কিসমতখানপুর থেকে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে রাতে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে চৌগাছা থানা পুলিশ।

আমরা রাতেই মামলা করতে চাইলে পুলিশ বলে এক হাতে তালি বাজে না। তোমাদের মেয়েরও সায় আছে। মামলা করে কি লাভ হবে। বাড়ি নিয়ে গিয়ে পারিবারিক ভাবে মিমাংশা করে নাও।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটিকে শনিবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সুরাইয়া পারভীন মানসিক ডিপ্রেশনের (এইচসিআর) রোগী হিসেবে তাকে ভর্তি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব বলেন, মামলা প্রক্রিয়াধীন। তবে এ ঘটনার মধ্যে রহস্য আছে। আমরা প্রকৃত রহস্য খুজে বের করার চেষ্টা করছি এবং রহস্য উদঘাটনও করবো।