রাণীশংকৈল “শিক্ষক সমিতি” নীতির কাছে বিক্রি, অভিভাবক মহলে অসন্তোষ প্রকাশ

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি বিক্রি হয়ে গেছে  গাইড বই এর কোম্পানির কাছে । এমন অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। শিক্ষক সমিতির এই বানিজ্য নীতিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ অভিভাবক মহল। প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা এমন অভিযোগ তুলে ধরেছেন জাতির কাছে।
মানুষ গড়ার  কারিগর শিক্ষক। যাদের জন্ম দোসর বলা হয়। তিনারা আজ টাকার বিনিময়ে শিশুদের অন্ধ্যকার ভবিষ্যতের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। অভিভাবকরা বলেন, পুরো বিবেক বিক্রী করে জিম্মি করে ফেলেছেন শিক্ষার্থীদের।
গোপন সূত্রে জানা গেছে , মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উপজেলার এই শিক্ষক সমিতির কাছে প্রফেসর  সিরাজুল ইসলাম এর লেখা “রেডিয়েন্ট কমিউনিকেটিভ ইংলিশ গ্রামার এ্যান্ড কমপজিশন” এবং ড.রঘুনাথ ভট্রাচার্য এর লেখা “আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি” প্রায় প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই গাইড চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে । প্রতিটি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষক সমিতির মনোনীত নতুন পাঠ্য পুস্তক তালিকা সহ প্রাপ্তি স্থানের ঠিকানা সংবলিত লিফলেট। পাঠ্য পুস্তক সংবলিত লিফলেট হতে জানা যায় রাণীশংকৈল উপজেলার বই বিচিত্রা লাইব্রেরী , টিচার্স লাইব্রেরী, মিজান লাইব্রেরী, হাসিনা লাইব্রেরী রাউৎনগর, স্টুডেন্ট লাইব্রেরী, জুঁই লাইব্রেরী, মায়ের দোয়া লাইব্রেরী, আদর্শ লাইব্রেরী কাতিহার এ এসব লেখকের বই পাওয়া য়ায়। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্য পুস্তক বাদ দিয়ে শিক্ষকদের মনোরঞ্জিত নিম্ন মানের বই শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে কিনতে হচ্ছে। যাতে করে অসহায় অভিভাবকদের অতিরিক্ত টাকার বই কিনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে ।
অপর দিকে ভাল লেখকের বই পড়তে না পেয়ে শিক্ষার্থীরা গুনগত মানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । প্রত্যক্ষদর্শী মোহনা টিভির রাণীশংকৈল প্রতিনিধি ফারুক আহাম্মদ সরকার নামের এক অভিভাবক জানান উপজেলার জুঁই লাইব্রেরীতে সপ্তম শ্রেণির দুটি গ্রামার বই আটশত টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। পরে দোকানির কাছে জানতে চাইলে জুঁই লাইব্রেরীর স্বত্তাধীকারী মোঃ বুলু বলেন,আমাদের করার কিছু নাই । শিক্ষক সমিতির নেতারা এই বইয়ের পার্সেন্টেজ আগে খেয়ে ফেলেছে । বাধ্য হয়ে আমাদের দোকানের ভাইল হিসেবে রাখছি ।
তিনি আরোও বলেন এর চেয়ে ভালো লেখকের দুটি গ্রামার বই চাইলে ও পাঁচশত টাকায় দিতে পারব। কিন্তু সেটা বিক্রি হবেনা বা হচ্ছে না । অভিভাবক মহশিন আলী ক্ষোভের সাথে জাানান, শিক্ষক সমিতির কাছে অভিভাবকরা জিম্মি। উপজেলার রাতোর উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নবম শ্রেণির বই কেনার লিষ্ট দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের, যা আছে লিষ্টে তাই কিনতে হবে এবং ওটাই পড়তে হবে , আপনি চাইলেও ওটার চেয়েও ভালো বই কিনতে পারতেন কিন্তু পারছিনা । এটাই কি হলো শিক্ষা ব্যবস্থা ।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস কে মাসুদ রানা পলক বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষক সমিতির বাণিজ্য নীতিকে প্রতিহত করে ভালো লেখকের বই গ্রামার শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া দরকার। এই শিক্ষক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন ২০১৮ সালে শিক্ষক সমিতির কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তার আগে হিসাব পত্র আমি দেখতাম এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাব রাখেন। অপরদিকে কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জওগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সব হিসাব পত্র সভাপতি মতিউর রহমানের কাছে আছে। এক অংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ সোহেল রানা বলেন, আমরা ঠাকুরগাওয়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের বই কিনতে বলি। তবে গাইড বানিজ্যের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এছাড়াও নেকমরদ অংশেও একই ভাবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত ব্যকরণ ও গাইড বই বাধ্যতামুলক কিনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী শাহরিয়ার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার ঠিক জানা নেই বলে মূল বিষয়টি এড়িয়ে যান।
আগস্ট ৩০, ২০১৯ at ১৭:১৮:১৪ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এইচকে/কেএ