গোদাগাড়ীর শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী গোপনে বিদ্যালয়ের সভাপতি!

রাজশাহী গোদাগাড়ীর শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন নয়ন ওরফে নয়ন ডাক্তারকে সভাপতি করে গোপনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার একটি স্কুলের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উপজেলার মাটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়েছে।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, নাসির উদ্দীন নয়ন ওরফে নয়ন ডাক্তারের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় একটি মাদকের মামলা আছে। তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। নাসির উদ্দিন নয়ন ওরফে নয়ন ডাক্তার এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তার মালিকানাধীন এক কেজি হেরোইনের একটি চালান আটক করা হয়েছিল। ওই সময় তার বিরুদ্ধে হেরোইন চোরাচালানের মামলা হয়েছিল।

এছাড়া ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ নয়নের ভাগ্নে জসিম উদ্দিনের দোকান থেকে ৯০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। গত বছরের শেষের দিকে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হলে নয়ন আত্মগোপন করেন। প্রায় ছয় মাস ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। সম্প্রতি আবারো এলাকায় এসেছেন। আর তাকেই গোপনে এলাকার স্কুলের সভাপতি করার অভিযোগ উঠলো। অবশ্য নয়ন স্কুলটির আগের কমিটিতেও সভাপতি পদেই ছিলেন।

জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দীন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এখনও তদন্ত শুরু হয়নি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কোনো মাদক ব্যবসায়ী স্কুলের সভাপতি হতে পারবেন কি না সে ব্যাপারে নীতিমালায় কি আছে তা দেখা হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

নতুন কমিটি গঠন নিয়ে গত ২২ আগস্ট জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে এই অভিযোগ দেন আসাদুজ্জামান মাসুম ও আব্দুল লতিফ নামের দুই প্রার্থী। অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র উত্তোলনের সময় ছিলো ২১ থেকে ২৩ জুলাই। ২৪ জুলাই যাচাই-বাছাই এবং পরদিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় ছিলো। নির্বাচনের দিন ঠিক ছিলো ৭ আগস্ট।

কিন্তু সভাপতি ও অভিভাবক সদস্য পদে এলাকাবাসীর ‘অনাকাঙ্খিত’ ব্যক্তিদের নিয়ে গোপনে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি অনুমোদনের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন না করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে বিধিবহির্ভূতভাবে। তাই অভিযোগপত্রে এই কমিটি বাতিলের আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগকারী আসাদুজ্জামান মাসুম জানান, কমিটির সভাপতি করা হয়েছে নাসির উদ্দিন নয়নকে। পদাধিকার বলে প্রধান শিক্ষক ইসমত আরা কমিটির সম্পাদক। আর অভিভাবক সদস্য করা হয়েছে মনোয়ারা বেগম, আরমান আলী, মোঃ আলী, উজ্জল হোসেন ও সাদিকুল ইসলাম। এছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে থেকে কমিটিতে আছেন- সহকারী শিক্ষক রাশেদুল হক, খোরসেদ আলম এবং খালেদা খাতুন।

আরও পড়ুন:
পুলিশের উপর হামলা অস্ত্রসহ আটক ৩ যুবক
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানো শীর্ষক আলোচনা সভা

আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, নাসির উদ্দিন নয়ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। একবার যেভাবেই হোক তিনি স্কুলের সভাপতি হয়ে যান। এবার এলাকার কেউ তাকে চাইছিলেন না। তাই আমরা ১০ জন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছিলাম। কিন্তু ভোট না দিয়ে কমিটি হয়েছে গোপনে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসমত আরা বলেন, গত ৭ আগস্ট স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ছিলো। উপজেলা শিক্ষা অফিসার দুলাল আলম সেদিন নির্বাচন না করে আমাকে কমিটির তালিকা দেন। শিক্ষা অফিসার নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন। তিনি কেন নির্বাচন করেননি সেটা আমি বলতে পারব না। শিক্ষা অফিসারের দেয়া তালিকার সদস্যদের নিয়ে আমি শুধু সভাপতি নির্বাচন করেছি।

এই কমিটি গঠন নিয়ে জানতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার দুলাল আলমকে ফোন করা হয়। তবে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে কথা বলতে চাননি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে মাদক ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন নয়ন বলেন, আমি স্কুলের অনেক উন্নয়ন করেছি। এবার আমি প্রার্থী হওয়ায় তারা বললো আমাকে দিয়ে অনেক উন্নয়ন হবে, আমাকেই সভাপতি করা হোক। আর দুজনের প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। অভিযোগকারির প্রার্থীতাও বাতিল হয়ে যায়। তখন সব সদস্যদের সিদ্ধান্তে আমাকে সভাপতি করা হয়।

আগস্ট ২৯, ২০১৯ at ১৯:৩৫:৫৪ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এমআর/কেএ