ইদের আগে ও পরের ৩০ দিন নিহত ২১২, আহত ৭৪২, দূর্ঘটনা ৯২১

পবিত্র ইদ উল আযহার আগে ও পরের ৩০ দিনে ৯২১ দূর্ঘটনায় আহত ৭৪২ এবং নিহত হয়েছে ২১২ জন। সড়কপথে দূর্ঘটনার পাশাপাশি রেল ও নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার সময় ছাদ থেকে পড়ে আহত হয়েছে ৮০ জন বলে তথ্য দিয়েছে আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ নিরাপদ করার জন্য নিবেদিত সেচ্ছাসেবি সংগঠন সেভ দ্য রোড।
২৯ আগস্ট বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় ইদ-উল-আযহার আগে ও পরের ৩০ দিন-এর পথ দূর্ঘটনার পরিসংখ্যান-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য উপস্থাপন করেন সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি ইদ ঈদের মত এবারো এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়- দেশে সড়কপথে চলছে চরম নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্য থেকে মুক্তির জন্য পুলিশ-প্রশাসনের পাশপাশি সচেতন হতে হবে বাংলাদেশের  সাধারণ মানুষকে।
ইদ উল আযহার আগে ও পরের ৩০ দিন (২৭ জুলাই ২৭ আগস্ট)’র পথ দূর্ঘটনার প্রতিবেদন
তারিখ : ২৮ আগস্ট বিকেল ৫ টা স্থান : বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ
ইদ-উল-আযহার আগে ও পরের ৩০ দিন-এর পথ দূর্ঘটনা ও প্রতিরোধের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন-এর ও মতবিনিময় সভায় সভাপতি সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জনাব জেড এম কামরুল আনাম অসুস্থ্য থাকায় সভাপতিত্ব করেন কথশিল্পী নাজমুল হক। অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, সেভ দ্য রোড-এর প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, উপস্থিত নেতৃবৃন্দ, সুধিবৃন্দ ও সুপ্রিয় সুধীবৃন্দ ও সাংবাদিক বন্ধুগণ
সালাম ও শুভেচ্ছা।
আপনারা জানেন সেভ দ্য রোড ২০০৭ সাল থেকে ক্রমশ সড়ক-আকাশ- রেল ও নৌ পথকে নিরাপদ করার জন্য নিবেদিত থেকে কাজ করে আসছে। ফি বছর ইদের আগে ও পরে এই বিষয়কে সামনে রেখে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, প্রতিবেদন পাঠ, সংবাদ সম্মেলন, মতবিনিময় সহ বিভিন্ন কর্মসূচী সামর্থনুযায়ী করে আসছে। সেচ্ছাসেবি  এই সংগঠনের সম্মানিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহাসচিবদের পাশাপাশি অবৈতনিক সম্মানিত গবেষক ও সেচ্ছাসেবি টিম-এর মাধ্যমে কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।তারই ধারাবাহিকতায় ইদ-উল-আযহার আগে ও পরের ৩০ দিন-এর পথ দূর্ঘটনা ও প্রতিরোধের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন-এর ও মতবিনিময় সভার এই আয়োজন। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, আমাদের মনিটরিং টিংম গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, হাইওয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গঠিত সেভ দ্য রোড-এর শাখায় দায়িত্বপালনকারী সেচ্ছসেবিদের তথ্যর উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন নির্মাণ করেছে। এবার ইদ-উল-আযহায় গরুর হাট ৪ দিন আগে করার সিদ্ধান্ত, ফুটপাত দখল করে গরুর হাট, বাজার বসানো সহ বিভিন্ন অসঙ্গতির কারনে পথ দূর্ঘটনা বেশি হয়েছে, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নেয়ায় নৌপথে কোন দূর্ঘটনা না ঘটলেও ছাদ থেকে পরে আহত হয়েছে ৪৪ জন। একই কারণে রেলের বগী থেকে পড়ে আহত হয়েছে ৩৬ জন। এবার ইদ উল আযহার আগে ও পরের ৩০ দিন (২৭ জুলাই ২৭ আগস্ট)’র পথ দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২১২, আহত হয়েছে ৭৪২ আর দূর্ঘটনা ঘটেছে ৯২১। যার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
ইদ-উল-আযহার আগে ও পরের ৩০ দিন-এর পথ দূর্ঘটনার পরিসংখ্যান
তারিখ মোটরবাইক দূর্ঘটনা/আহত/নিহত ট্রাক দূর্ঘটনা/আহত/নিহত বাস
দূর্ঘটনা/আহত/নিহত অন্যান্য
২৭ জুলাই ২০১৯ ১১/১১/১ ২/০২/১ ৫/০৬/১ ৯/২/
২৮ জুলাই ২০১৯ ৮/৮/১ ৫/২/২ ৭/৮/২ ১১/২/
২৯ জুলাই ২০১৯ ৭/৭/২ ৭/৪/২ ১৭/৭/২ ১৭/৪/
৩০ জুলাই ২০১৯ ৭/৭/ ৯/৫/২ ১২/৫/২ ১৭/৫/
৩১ জুলাই ২০১৯ ৯/৯/৩ ৬/৩/২ ১৪/৩/২ ১৬/৩/
১ আগস্ট ২০১৯ ১৮/১৮/৬ ৮/৭/২ ১৪/১১/২ ৯/৭/
২ আগস্ট ২০১৯ ১১/১১/২ ১১/৯/৪ ২১/৮/৪ ৬/৯/
৩ আগস্ট ২০১৯ ৭/৭/২ ৪/৩/১ ১১/৮/১ ৯/৩/১
৪ আগস্ট ২০১৯ ৯/৮/৮ ৫/১/১ ১৪/১১/১ ৫/১/১
৫ আগস্ট ২০১৯ ১১/১১/১ ৯/১/২ ১১/১/২ ৯/১/২
৬ আগস্ট ২০১৯ ১৪/১৪/৬ ৬/১/২ ৩/১/২ ৩/১/২
৭ আগস্ট ২০১৯ ৪/৫/২ ৫/১/২ ৪/১/২ ৩/১/২
৮ আগস্ট ২০১৯ ৬/৬/১ ১/১/ ৮/১/ ৫/১/
৯ আগস্ট ২০১৯ ৩/৩/১ ৪/২/১ ৩/২/১ ৯/২/১
১০ আগস্ট ২০১৯ ১২/১২/২ ১১/১১/৪ ৪/৬/৪ ২০/১১/৪
১১ আগস্ট ২০১৯ ১৭/২০/২ ৯/১/৬ ৮/২১/১ ১৯/১/৬
১২ আগস্ট ২০১৯ ৪/৪/- ২/৪/২ ৩/১৪/২ ১১/৪/১
১৩ আগস্ট ২০১৯ ২/৪/১ ৩/১/২ ২/১/১১ ৩/১০/১
১৪ আগস্ট ২০১৯ ৪/৫/১ ৪/৪/২ ১০/৪/১০ ৪/৮/
১৫ আগস্ট ২০১৯ ৬/১১/১ ৪/৬/২ ৯/৬/৭ ৪/৬/
১৬ আগস্ট ২০১৯ ৮/১১/১ ৬/৬/২ ৬/৬/৪ ১৬/৯/২
১৭ আগস্ট ২০১৯ ১১/১৪/২ ৪/৫/২ ৪/১৫/১ ১১/৪/
১৮ আগস্ট ২০১৯ ১৪/১১/১ ৫/৬/২ ৫/১৬/২ ০৪/৬/২
১৯ আগস্ট ২০১৯ ৬/১০/৩ ৫/৮/ ৫/৮/১ ১৪/৮/
২০ আগস্ট ২০১৯ ৫/৫/ ৯/১১/২ ৯/১১/২ ৯/১১/
২১ আগস্ট ২০১৯ ৩/৫/১ ১/১/ ৬/১/১ ১১/৯/১
২২ আগস্ট ২০১৯ ৩/৪/ ১/১/ ৩/৬/১ ১১/৭/
২৩ আগস্ট ২০১৯ ৪/৫/ ২/৩/২ ৪/১৩/১ ২২/৩/২
২৪ আগস্ট ২০১৯ ৪/২/২ ৬/৮/২ ৮/১১/১ ৬/১২/২
২৫ আগস্ট ২০১৯ ৬/৭/১ ৮/১০/১ ৩/১০/৩ ৮/১০/১
 মোট ২৩৪/২৫৫/৫১ ১৫৫/১১০/৫১ ২৩১/২২৬/৭২ ৩০১/১৫১/৪০
বাংলাদেশে সড়কপথে দূর্ঘটনা না কমানোর জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন সেক্টরে কেবলমাত্র প্রশাসনিক অদক্ষতাই নয়; দায়ী দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার।
পাশাপাশি যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন সেই সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া একশ্রেণির চাঁদবাজ সিন্ডিকেট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থার কারণে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস, ট্যাক্সিক্যাব ও অটোরিক্সার এই মহাসংকট ও স্বল্পতা। তারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার আদর্শচ্যুত হয়ে একের পর অপকর্ম করে যাওয়ায় আমাদের পথ নিরাপদ হচ্ছে না। সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের নিরাপদ পথচলা আমাদের জনগনের অধিকার। সেই অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগনের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই বলে সেভ দ্য রোড মনে করে। আর তাই বারবার ৭ দফায় ফিরে যাই। পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে গত ১২ বছর যাবৎ ৪ পথ নিরাপদ করতে সেভ দ্য রোড-এর ৭ দফা দাবী নিয়ে এগিয়ে চলা অব্যহত রয়েছে ছাত্র-যুব-জনতা-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ঐক্যবদ্ধতায়। আর সেই ৭ দফা হলো- ১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘নিরাপদ পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। ২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দিতে হবে।  ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। ৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতু সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।   পরিশেষে বলবো- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ জাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে চেষ্টার কোন কমতি করছেন না। তবুও মনে হচ্ছে- রাজধানীর দুঃসহ যানজট ও গণপরিবহন সেক্টরে বিরাজমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পেছনে সরকারের জনবান্ধব পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। পৃথিবীর ভূ-মানচিত্রে রাজধানী ঢাকা অতিঘনবসতিপূর্ণ একটি অপরিকল্পিত শহর, সর্বপরি ভূমি বুভুক্ষু বাংলাদেশ। একটি পরিবেশসম্মত নগরে ২৫% সড়ক পথ থাকা জরুরি। অথচ আমাদের আছে মাত্র ১২%। রাজধানী ঢাকার সড়কের ৬৫% জায়গা ব্যবহার করে মাত্র ৫% নাগরিকের ব্যবহৃত প্রায় ৪ লক্ষ প্রাইভেটকারসহ ছোট গাড়ি। আর ৩৫% সড়কের জায়গা ব্যবহার করে ৯৫% যাত্রী জনতার জন্য চলাচলকৃত গণপরিবহন। রাজধানীর সড়ক পথে রোজ যুক্ত হয় ৩১৬ টি যন্ত্র চালিত গাড়ি। যার মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ১ টিরও কম। এই রাজধানী ঢাকায় নতুন করে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে রোজ যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৪শ ১৮ জন। যা বছরে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫শ জনে। প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে বিভাগীয় ও জেলা শহরে আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, আধুনিক কারিগরী শিক্ষা, আধুনিক চিকিৎসা সেবা, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ঢাকামুখি জনস্রোত বন্ধ করা জরুরি। রাজধানীর পরিবহন সেক্টরে বিদ্যমান গণদুর্দশা ও গণনৈরাজ্যের এটিও একটি কারণ। রাজধানী ঢাকার যানজট, জনজটসহ সকল নৈরাজ্যকর অবস্থার অন্যতম কারণ সকল রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড ঢাকা কেন্দ্রিক পরিচালনা, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন এবং গণপরিবহনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত প্রাইভেটকার চলাচল। ট্রাফিক আইন যথার্থ নিয়মে না মানা ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ এবং অশিক্ষিত ব্যক্তিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ফলে সড়ক-মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কসমূহে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। এমতবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য নাগরিদের সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আসতে হবে। যদ জনগন এগিয়ে আসে সেভ দ্য্য রোড-এর দাবী বাস্বায়ন হবে, দেশ হবে নিরাপদ, ৪ পথ হবে নিরাপদ।
আগস্ট ২৯, ২০১৯ at ১৭:৪৫:৫৪ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসএফ/কেএ