পরিত্যাক্ত পলিথিন থেকে পেট্রোল-অকটেন-ডিজেল ও এলপি গ্যাস তৈরি 

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে রোস্তম আলী নামের এক ছাত্র পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতল পুড়িয়ে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও এলপি গ্যাস তৈরি করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তার তৈরি করা পদ্ধতি ও জ্বালানী সরেজমিনে দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভীড় জমাচ্ছে। খবর পেয়ে আজ (২৮ আগস্ট) বিকালে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহঃ রাশেদুল হক প্রধানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রোস্তম আলীর পেট্রোল তৈরি পদ্ধতি পরিদর্শন করেছেন। রোস্তম আলীর তৈরি করা তরল জ্বালানী এক সময় খনিজ সম্পদে প্রভাব ফেলে অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হবে অনেকে ধারনা করছে।

গত ২৭ আগষ্ট মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল বালাকান্দি গ্রামের কৃষক মফিজুল হকের পুত্র রোস্তম আলী (২২) বাড়ীর উঠানেই একটি আবদ্ধ তেলের ড্রামে বেশকিছু পরিত্যক্ত পলিথিন রেখে আগুন দিয়ে তাপ দিয়ে পলিথিন গলিয়ে ডিজেল পেট্রোল অকটেন ও এলপি গ্যাস তৈরি করে।

আরও পড়ুন :
সিমান্তবর্তী এলাকায় গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা
এলজিইডির জীপ চালক খুন

এসব জ্বালানি তার নিজস্ব মটর সাইকেলে দিয়ে চালনা করে এলাকার মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। এছাড়া মাটি ও পানিতে ওই তরল পদার্থ ফেলে দিয়ে আগুন প্রজ্বলিত করে পেট্রোল প্রমাণ করেছেন। পলিথিনে পেট্রোল তৈরির ঘটনাটি রাজারহাট উপজেলা, উলিপুর উপজেলা ও কুড়িগ্রাম জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সাড়া জাগায়। প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে শত শত দর্শক এসে রোস্তম আলীর তৈরি করা পেট্রোল ডিজেল অকটেন ও এলপি গ্যাস অবলোকন করেন।

রোস্তম আলী জানান, ছোট বেলায় শীতকালে ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো দিয়ে বাড়ীতে পোড় দেয়া হতো। সেখানে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল পোড়া যেত। পলিথিন পোড়া গিয়ে টোপে টোপে তরল পদার্থ পড়তো। কিন্তু সেটি পরিবেশ বান্ধব ছিল না। এটি নিয়ে রিসার্স করা হয়। ২০১৭ সালের দিকে একদিন টিনের ছোট কৌটায় পলিথিন পুড়ে তরল পদার্থ বের করি। সেগুলো শোধন করে পরীক্ষা করে দেখতে পাই এগুলো ডিজেল ও পেট্রোল জাতীয় তরল পদার্থ।

পরে পরিকল্পনা মোতাবেক পরিত্যক্ত পলিথিন যত্রতত্র ফেলে না দিয়ে এগুলো সংগ্রহ করে একটি আবদ্ধ প্রকোষ্ট ড্রামে ভিতরে রেখে আগুনে অতিমাত্রায় তাপ প্রয়োগ করে গলিয়ে ফেলা হয়। বাস্পায়িত হয়ে ডিজেল এবং নল দিয়ে বের হয়ে পেট্রোল অকটেন তৈরি হয়। যত তাপমাত্রা বেশী দেয়া হত তত বেশী তরল পদার্থ নির্গত হয়। সেই সাথে গ্যাস বের হয়। এসব সংগ্রহীত তরল পদার্থ দুটি পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয়।

রোস্তম আলী দাবী করেন, এই তরল পদার্থ গুলো হাইড্রোকার্বন এবং এগুলোর ধর্ম এবং বর্ণ ডিজেল পেট্রোল অকটেন এবং নির্গত গ্যাস এলপি গ্যাস এর মতো। তাই এগুলো ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও এলপি গ্যাস। তিনি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার সুযোগ না পেলেও প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করেছেন।

এছাড়া সংসারের হাল ধরতে সে প্রাইভেট টিউটর হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে। তার গবেষনায় পরিবেশ বান্ধব পরিত্যাক্ত পলিথিন প্লাস্টিক থেকে ডিজেল পেট্রোল এলপি গ্যাস ছাড়াও বেশ কযেকটি আর্কষনীয় গবেষনা রয়েছে। এর মধ্যে উছিষ্ট পলিথিনের ছাই ফটোসষ্ট্যাট মেশিনের কালি হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করার পদ্ধতি চালিয়ে যাচ্ছে।

আজ (২৮ আগষ্ট) বুধবার এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহঃ রাশেদুল হক প্রধান বলেন, রোস্তম আলীর পলিথিন পুড়ে পেট্রোল তৈরির বিষয়টি দেখলাম। এটি একটি ভাল উদ্যোগ। রোস্তম আলীর যদি আরো উন্নতভাবে তৈরি করতে সহযোগীতা লাগে তাহলে সহযোগীতা করা হবে।

আগস্ট ২৮, ২০১৯ at ১৮:৫৮:১৮ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/এজিএল/আজা