ঝিনাইদহকে জুয়ামুক্ত করে নজীর দেখিয়েছেন পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান

ঝিনাইদহ জেলার কোথাও এখন জুয়া খেলা নেই। নেই লটারির আর যাত্রা পালার নামে অসামাজিক কাজ কারবার। জুয়ামুক্ত ঝিনাইদহ গড়ে নজীর স্থাপন করলেন পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান পিপিএম। অথচ এই জুয়াতে ওয়ান টেন সহ কয়েক ধরনের খেলার প্রচলন ছিল জেলাজুড়ে।

যেখানে লাখ থেকে কোটি টাকার হাত বদল হয়ে আসছিল প্রতিরাতে। বিভিন্ন জেলা থেকে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে জুয়াড়িরা আসত জুয়া খেলতে। রাতভর চলত এই জুয়া খেলা। তবে সে চিত্র পাল্টে দিয়েছেন ঝিনাইদহের বর্তমান পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান।

স্থানীয়রা বলছে, গত প্রায় ১বছর ধরে জেলার কোথাও আর জুয়ার আসর চোখে পড়ে না। সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গেছে সর্বশান্ত হওয়ার এই মরণ নেশার খেলা। অনেক জুয়াড়ী, জুয়ায় আসক্ত তরুন-যুবক ফিরে এসেছে স্বাভাবিক জীবনে। বর্তমান পুলিশ সুপারের কঠোর অবস্থানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের জুয়ার আসর ।

আরও পড়ুন :
মদ খেয়ে মাতলামি করায় দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত
আ’লীগের দুগ্ররুপের মধ্যে সংঘর্ষ মহিলাসহ আহত ২০

ঝিনাইদহে যোগদানের পর থেকে প্রায় ১বছর ধরে বন্ধ রয়েছে জুয়া খেলা। অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, অনেকে টাকা পয়সা খুইয়ে এবং নানা বিপত্তি সত্ত্বেও জুয়া খেলা ছাড়তে পারে না। বহুবার জুয়ার নেশা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেও অনেকে শেষ পর্যন্ত জুয়া খেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারতো না কিছু মানুষ।

অনেক সময় জুয়ার কারণে এলাকায় চুরি-ছিনতায় সহ নানা অপরাধ কার্যক্রম দেখা দেয়। যে এলাকায় জুয়া খেলা হয় সেখানকার গ্রামীন অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ঝিনাইদহ জেলায় যাত্রাপালা, সার্কাস, লটারী বা অন্যান্য উৎসব উপলক্ষেই নয় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জুড়েই জুয়া খেলা হয়ে আসছিল।

বিশেষ করে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী, সাধুহাটী, শিল্পকলা একাডেমী এলাকা, হামদহ স্ট্যান্ড, আরাপপুর জামতলা, ঢোল সমুদ্র এলাকাসহ কয়েকটি স্পটে নিয়মিত জুয়া চলত। শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর বেবি স্ট্যান্ড, ওয়াপদাহ কলোনী, মাইক্রোস্ট্যান্ড, শেখপাড়া বাজার, চড়িয়ারবিল, তমালতলা, লাঙ্গলবাধ সহ ছোট-খাট হাটবাজার এলাকায় এই জুয়া ছিল নিত্যদিনের খেলা।

কালীগঞ্জের বলিদাপাড়া, কাশিপুর বেদে পাড়া, শীবনগর, কোটচাঁদপুরের বলুহর বাসস্ট্যান্ড, কাঠালিয়া বাজার, মহেশপুরের বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চল, হরিনাকুন্ডর কিছু স্পটে নিয়মিত আগে জুয়া চলত স্থায়ী ভাবে। এসব জুয়া খেলার সাথে স্থানীয় কিছু সমাজপতি, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, বড় বড় রাঘোব-বোয়াল, হোমরা-চোমরাা, সন্ত্রাসী, গ্যাং গ্রুপদের অংশ গ্রহণও দেখা যেতো।

পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান পিপিএম মঙ্গলবার গনমাধ্যমকর্মীদের জানান, স্বদিচ্ছা সবার আগে রাখতে হবে তাহলে অনেক কিছুই সম্ভব। তিনি বলেন স্বদিচ্ছা, দায়িত্ববোধ আর সততার উপর দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন তিনি।

জুয়া বন্ধ করা অনেকটা কঠিন ব্যাপার ছিল উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জুয়াড়ীরা অনেক সময় অর্থের অফার দিয়েছে কিন্তু আমি সততার প্রতি অটল। এদের মোকাবেলা করতে, ধড়পাকড় করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে যেতে হয়েছে ।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার হিসাবে যোগ দেন হাসানুজ্জামান পিপিএম। আর যোগদানের পর থেকেই জেলার শৃঙ্খলা উন্নতির নানা চেষ্টার পাশাপাশি তিনি জুয়ার আসর বন্ধ করার সংগ্রামে নেমেছেন।

আগস্ট ২৭, ২০১৯ at ২০:৩৩:১৮ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/কএল/আজা