নতুন সিন্ডিকেটের একমাত্র হাতিয়ার রোহিঙ্গা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার অভিযান আর ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণের পরে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। ভয়াবহ লাভজনক ব্যবসাটি টিকিয়ে রাখতে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন ইয়াবা সিন্ডিকেট। আর রোহিঙ্গারা পরিণত হয়েছে তাদের প্রধান হাতিয়ারে। তাদের মাধ্যমেই মিয়ানমার থেকে আনা হচ্ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বল চেকপোস্টের গণ্ডি পেরিয়ে সর্বনাশা এ মৃত্যু বীজ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সারাদেশে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এক সময় স্থানীয় লোকজন মাছ ধরার আড়ালে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনলেও বর্তমানে প্রশাসনের কড়াকড়িতে সেটা আর হচ্ছে না। পুরনো সিন্ডিকেটের অনেকেই ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে, বাকিরা আছে জেলহাজতে। এই সুযোগে ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে সীমান্ত এলাকার কমপক্ষে ১০টি নতুন সিন্ডিকেট।

আরও পড়ুন :
জয়পুরহাটে শোক দিবস উপলক্ষে স্বরনসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে
আজ জাতীয় কবির ৪৩তম প্রয়াণ দিবস

নতুন সিন্ডিকেটের একমাত্র হাতিয়ার রোহিঙ্গারা। রাতের আঁধারে লুকিয়ে মিয়ানমার গিয়ে ইয়াবার চালান এনে রেখে দিচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই। সীমান্ত এলাকা কাছাকাছি হওয়ায় খুব সহজে মিয়ানমারে যেতে পারে রোহিঙ্গারা। যেহেতু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয় না, সেহেতু ক্যাম্পের মধ্যেই রাখা হয় চালান। পরে সুযোগমতো বিভিন্ন মাধ্যমে স্থানীয় সিন্ডিকেটের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেয়া হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, টেকনাফ ও উখিয়াতে যেসব চালান ধরা পড়েছে তার বেশিরভাগই আনছে রোহিঙ্গারা। চলতি বছরে এই দুই থানায় ইয়াবাসহ ১৬১ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের আয়ের উৎস খুবই কম। এজন্য প্রতি মাসে একবার বা দুবার মিয়ানমার থেকে চালান নিয়ে আসে তারা। অনেক সময় ব্যবহার করা হয় এনজিওর গাড়ি চালকদেরও।

চলতি মাসেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১৬ জন রোহিঙ্গাকে। এদের মধ্যে অনেক নারী সদস্যরা রয়েছে। আর পুরুষরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাফ নদী সাঁতরিয়ে ইয়াবা আনছে।

দেশদর্পনে আরও পড়ুন :
পেটের মেদ কমাতে রসুন
বিয়ের পর ফিট থাকতে যা খাবেন

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি হামিদ ও পালংখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আলফাতুন ধইন্নার ছেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার রাশেদ এখন অন্যতম গডফাদার।

সম্প্রতি ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় রাশেদের বড় ভাই সেলিম। এরপরেও রোহিঙ্গাদের দিয়ে দিব্যি ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সে। থাইংখালী স্টেশনের পানের দোকানে বসে সীমান্তের ইয়াবা কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে সুলতান ফকিরের ছেলে নুরুল আমিন। এতে আরো যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হচ্ছে, রাজাপালং ইউনিয়নের দোছড়ি এলাকার আলি আহমেদের ছেলে মাহমুদুল হক, টাইপালং গ্রামের মৃত দরবেশ আলির ছেলে গিয়াসউদ্দিন সিকদার, উখিয়া কলেজ সংলগ্ন আবদুল করিম হাজির ছেলে হুমায়ুন কবীর ও টিএন্ডটি লম্বাগোনা গ্রামের মৃত ফকির আহম্মদের ছেলে শাহাব উদ্দিন।

তুমব্রু সীমান্তের ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান পাণ্ডা আলমগীর। একসময় অটোরিকশা চালালেও বর্তমানে মাইক্রোবাসসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন রাতারাতি। রাজাপালংয়ের সীমান্তবর্তী ডেইলপাড়া গ্রামে মৃত আলি আহম্মেদের ছেলে নুর আলম, ফরিদ আলমের ছেলে জাফর আলম, হোসেন আলির ছেলে আনোয়ার ইসলাম, সাব্বির আহম্মেদের ছেলে জসিম উদ্দিন, আজিজুর রহমানের ছেলে সামসুল আলম এবং মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে রফিক আলম সমন্বয়ে একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

টেকনাফের হ্নীলার পূর্ব পানখালী গ্রামের মৃত ছালেহ আহম্মদের মেয়ে রেহানা বেগম ইয়াবা ব্যবসার হাল ধরেছেন। এ ছাড়া টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাতিয়ার ঘোনা গ্রামের বশর হাজির ছেলে ইউপি সদস্য আবদুল্লাহ স্ত্রীসহ সৌদি আরব পলাতক থেকেও ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন।

আগস্ট২৭, ২০১৯ at ১৩:০২:১৮ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/আজা