ডেঙ্গুতে স্কুল ছাত্রসহ তিন জনের মৃত্যু

মণিরামপুরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এক স্কুল ছাত্রসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিতে আসা ১২৬ জনের মধ্যে ১০জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধ্যান মিলেছে।

ফলে সারা মণিরামপুর উপজেলাব্যাপি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে বর্তমানে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। জ্বর হলেই রোগী সাধারন আর দেরি না করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য ভিড় করছেন। প্রতিদিন গড়ে ৪শ থেকে ৫শ রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে আউট ডোর থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য ভিড় করছেন।

এদের মধ্যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের আশংকায় অতিসম্প্রতি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে রোগীদের ভিড় বেশি লক্ষনীয়। গত শনিবার বেলা ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে য়েয়ে আউট ডোরে ও প্যাথলজি বিভাগে রোগীদের বেশ ভীড় লক্ষ্য করা যায়।

আরও পড়ুন :
অনলাইনে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মানববন্ধন
সীমান্তে চোরাচালান রোধে সতর্ক বিজিবি

হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট আনিসুর রহমান জানান, গত কয়েকদিনে রোগীর চাপ খুবই বেশী। রোগীদের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। ডেঙ্গু রোগে তিন ব্যক্তি মারা যাবার পর থেকে জনমনে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আর সবাই এখন সামান্য জ্বর হলেই ডেঙ্গুর পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসছেন বলে এতো রোগীর ভিড় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে উপজেলার আব্রঝুটা গ্রামের মৃতঃ আক্কাজ আলীর ছেলে মিল শ্রমিক আব্দুল গাফফার(৫২) গত ২০ আগস্ট মারা যান। গত ১৭ আগস্ট ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে তিনি যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার আদ্বদ্বীন হাসপাতালে রেফার করা হয়।

সেখানে ২০ আগস্ট চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান। উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের নুর মোহাম্মাদের ছেলে গার্মেন্স শ্রমিক শুকুর আলী(২৫)ঢাকা থেকে বাড়ীতে বেড়াতে আসলে গত ২৩ জুলাই তার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে ওই দিনই তাকে জরুরী ভাবে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ২৪ জুলাই তিনি মারা যান। এ ছাড়া গত ১৩ আগস্ট উপজেলার মধুপুর গ্রামের আসাদুল্লাহর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আরিফ (১২) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসারত অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালে মারা যায়।

স্কুল ছাত্রসহ তিন ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে মারা যাওয়ার পর থেকে এবং সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে ভিতির কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নির্নয়ের কিডস সামগ্রীর কোন ঘাটতি না থাকায় রোগীরা এখন হাসপাতালমুখি হচ্ছেন। রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসার ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সগন বেশ তৎপর আছেন বলে তিনি দাবি করেন। রোববার সরেজমিন হাসপাতালে যেয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ৫জন নারী রোগী হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু, নারী ও পুরুষসহ মোট ৬৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, ঈদের ছুটিতে অনেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে বাড়ীতে আসায় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তথা প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করা এবং ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ ও যথাযথ চিকিৎিসা সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

আগস্ট ২৫, ২০১৯ at ২২:১৮:১৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহাে/বএইচ/আজা