কুরিয়ার সার্ভিসে দেদারসে পাচার হচ্ছে মাদক !

মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টানা অভিযানের মধ্যেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। অভিযানের কারণে কৌশল বদল করে মাদক কারবারিরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদক দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাঠাচ্ছে।

র‌্যাব, পুলিশের একাধিক অভিযানে কুরিয়ারে পাচারকৃত মাদকের চালান আটক হলেও কারবারিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম, ফেনী, কক্সবাজার, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে অন্তত অর্ধশত কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ইয়াবা চালান আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এসব ঘটনায় প্রাপক গ্রেপ্তার হলেও প্রেরক সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। সর্বশেষ গত ১৯ মে রবিবার রাজধানীর উত্তরায় কুরিয়ার সার্ভিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এসএ পরিবহনের অফিস থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা জব্দসহ দুই মাদক কারবারিকে হাতেনাতে আটকের পর কুরিয়ার সার্ভিসটির তিন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান জানান, এসএ পরিবহনের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম, উত্তরা শাখার ম্যানেজার মো. মোস্তফা ও সহকারী ম্যানেজার মো. খসরুজ্জামান জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, মাদক পরিবহনে এসএ পরিবহনের অবশ্যই গাফিলতি আছে।

এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে ইয়াবা পরিবহনের অভিযোগ উঠেছে, ধরাও পড়েছে। পরিবহন যখন হয় তখন যে নামেই পরিবহন হোক না কেন স্ক্যানারের মাধ্যমে দেখা উচিত। কেউ বিস্ফোরক পাঠালেই কি তা পরিবহন করবে? মাদক থাকলেও পাঠাবে? এসএ পরিবহনসহ সব কুরিয়ার সার্ভিসকে সতর্ক থাকা উচিত উল্লেখ করে লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, আমাদের পোস্টাল ১৮৯৮ যে অ্যাক্ট আছে তা দিয়েই এসব কুরিয়ার চলে। সেখানে স্পষ্ট আছে যে, যেগুলো সরকার কর্তৃক অবৈধ তা পরিবহন করতে পারবে না।

র‌্যাব-৩-এর এএসপি রবিউল ইসলাম জানান, মীর কাশেম (৩১) ও মোরশেদ আলী (৩৩) নামে দুই মাদক কারবারি কক্সবাজার থেকে এসএ পরিবহনের মাধ্যমে ইয়াবার একটি চালান পার্সেল করে বিমানে ঢাকায় আসেন। একদিন পর উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের আলাওল অ্যাভিনিউ এলাকার ২০ নম্বর বাড়িতে এসএ পরিবহনের শাখা থেকে রিসিভ করতে গিয়ে র‌্যাব-৩-এর হাতে ধরা পড়েন তারা।

পরে জানা যায়, এক লাখ পিসের ওই ইয়াবার চালান আনা হয় ঝিনুকের তৈরি কানের দুল ও মাথার চুলের ক্লিপের অলঙ্কারের কার্টনে। তিনি বলেন, এ ইয়াবা পাচারে কুরিয়ার সার্ভিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এসএ পরিবহনের গাফিলতি স্পষ্ট। ইয়াবা ব্যবসা, পরিবহন কিংবা চালান আনা নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত বছরের ২৭ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিলে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা রিসিভ করার সময় র‌্যাব-১০-এর অভিযানে ধরা পড়ে চার ইয়াবা চোরাকারবারি। তারা কক্সবাজার থেকে পাঠানো ইয়াবা মতিঝিলে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে রিসিভ করতে এসে গ্রেপ্তার হয়। ক্রিমের কৌটায় করে ইয়াবাগুলো ঢাকায় আনা হয়েছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা আগেই কুরিয়ার অফিসের সামনে অবস্থান নেন এবং ইয়াবার ওই চালান গ্রহণ করার সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করেন তারা।

২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকায় র‌্যাবের অভিযানে এসএ পরিবহনের কুরিয়ার সার্ভিসে এক লাখ পিস ইয়াবা মিলে। চট্টগ্রাম থেকে ওই পার্সেল পাঠানোর তথ্য পায় র‌্যার। ২০১৩ সালের অক্টোবরে কুরিয়ারে পাচারকালে ঢাকায় ধরা পড়ে হেরোইনের চালান।

আগস্ট ২৫, ২০১৯ at ০২:১২:১৭ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/বিকে/তআ