একাধিক পর্ন সাইটে ডিসি‘র আপত্তিকর ভিডিও, সর্বত্র নিন্দার ঝড়

জামালপুর জেলা প্রশাসকের একটি অনৈতিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই তার একই ধরনের আরো একটি ভিডিও বিভিন্ন পর্নো সাইডে দেখা গেছে।

২৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এ ভিডিওতে ওই মহিলা অফিস সহকারীর (সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা) সঙ্গে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়। এ ঘটনায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ডিসির এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন অনেকেই। এ ন্যক্কারজনক ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে অফিসের মহিলা সহকারীর সঙ্গে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর অবস্থার ৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। জেলা প্রশাসকের এমন কর্মকাণ্ডের পর শুক্রবার ভোর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে শুক্রবার সকাল ৮ থেকে ওই আইডিতে ভিডিওটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এর মধ্যেই ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ভাইরাল হওয়ায় ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা ডিসির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে শুক্রবার দুপুরে জামালপুর সার্কিট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বিষয়টি বানোয়াট দাবি করে বলেন, আমি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। আপনারা আমাকে একটু সময় দিবেন। প্রকৃত ঘটনা জানতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি সাজানো ভিডিও এবং একটি ফেইক (ভুয়া) আইডি থেকে পোস্ট দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসকের এই সংবাদ সম্মেলনের খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পর ডিসি আহমেদ কবিরের ওই একই মহিলার সঙ্গে ২৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের আরো একটি অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও বিভিন্ন পর্নো সাইডে দেখা যায়। এতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বিষয় নিয়ে মুখ খলছেন না জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা।

জেলা প্রশাসকের মতো একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা সর্বনি¤œ পর্যায়ের একজন নারী কর্মচারীর সঙ্গে অবৈধ যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলার মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ ও প্রচারের পর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের বারান্দায় ভিক্ষুকমুক্ত জামালপুর গড়তে নাটিকা ও জেলা প্রশাসকের বক্তব্য সম্প্রচারিত হয়ে আসা সেই টিভিসেট গতকাল শনিবার সকালে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আর জেলা প্রশাসকের কক্ষের খাস কামরা থেকেও আলোচিত খাটটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. মুহম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় জামালপুর জেলাবাসীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। লজ্জাস্কর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

জেলা প্রশাসক কর্তৃক তার কর্মচারীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয় নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, এ ধরনের অনৈতিক কাজের বিচার না হলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় পড়বেন।

শিক্ষক সমিতির নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ ন্যক্কারজনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আমীর উদ্দিন বলেন, বিশ^াস করতে কষ্ট হয়, একজন জেলা প্রশাসক এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে! চরম অনৈতিক এ ঘটনায় তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ তাকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এদিকে ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন জেলা প্রশাসকের ওই মহিলা অফিস সহকারী। আর বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি জামালপুর শহরের বগাবাইদে বসবাসরত তার পরিবার।

আগস্ট ২৫, ২০১৯ at ০১:৩৯:১৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/বিকে/তআ