সহায় সম্বল হারিয়ে হতাশায় চৌগাছার ‘নৈশপ্রহরি-কাম-দপ্তরি’ পদের নিয়োগ প্রত্যাশিরা

স্থগিত হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরি পদে নিয়োগ। ২১ আগষ্ট প্রাথমিক ও গন শিক্ষা মন্ত্রালয়ের সচিব মোঃ আকরাম আল হোসেন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ নিয়োগ স্থগিত জারি করেছে।

৩৮.০০২.০১৫.০০.০০.০২৪.২০১০-১১১৬ নং স্বারকের পরিপত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরি পদে আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে বিদ্যমান নীতিমালার আলোকে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো এবং ইতিমধ্যে যদি কোনো উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য দপ্তরি কাম প্রহরি পদে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান থাকে তা বাতিল করা হলো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন উপজেলার নিয়োগ প্রত্যাশিরা।

নিয়োগ প্রত্যাশিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছয় বছর আগে চৌগাছায় ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়। এই পদে নিয়োগ পেতে বাপের সহায়সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন তারা। পরবর্তীতে আদালতের এক রায়ে সারাদেশে স্থগিত হয়ে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া।

আরও পড়ুন :
চৌগাছার দুই কৃতি সন্তানের এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ
বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

পরে আদালতের রায় হলেও চৌগাছায় নিয়োগ সম্পন্ন করা যায়নি। পরবর্তীতে পূর্বের ২১ টিসহ ৪১ বিদ্যালয়ে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও স্থানীয় নেতাদের গ্রুপিংয়ের কারনে নিয়োগ বানিজ্যে বনিবনা না হওয়ায় আবারো বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে উচ্চ আদালতে রিট থাকায় ৪১টি বিদ্যালয়ের দপ্তরি নিয়োগ ঝুলে আছে।

যদিও সে সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন স্থবির থাকা জেলার ১৫৬ বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। অচিরেই এই বিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলেও আশাবাদী ছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছিল, যে সকল বিদ্যালয়ে এখনও নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি, ওই সকল বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরী জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ঝুলে থাকা ১৫৬টি বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু চৌগাছার ৪১টি, অভয়নগরের ২টি বিদ্যালয়ের নিয়োগের বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় সেগুলো নিষ্পত্তি হয়নি। দীর্ঘদিন হচ্ছে হবে’র দোলাচালে থেকে অবশেষে সেআশাও বাতিল হলো।

চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি প্রার্থী মফিজুর রহমান বলেন, চাকরি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে যাওয়ায় খুব কষ্টে আছি। তিনি আরও বলেন, আমরা ১৭ জন মিলে উচ্চ আদালতে রিট করেছি। আদালতের রায় না পেলে নিয়োগ হচ্ছে না। দ্রুত নিয়োগটা হয়ে যাবে সেই আশায় করছিলাম। লেনদেন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাতো হয়েছেই। এখন কি করবেন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

দেশ দর্পণে আরও পড়ুন :
পরিস্কার- পরিচ্ছন্নতা ও এডিস মশা নির্মূলে নামলেন ইবি ভিসি
শিক্ষার্থী মৃত্যুতে যবিপ্রবি উপাচার্যের শোক

যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি প্রার্থী বাদশা বলেন,চাকরি হওয়ার পরে টাকা দেওয়ার কথাছিল। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাকরি প্রার্থী বলেন, দুইজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধির টানাটানিতে আমরা বলি হয়েছি। তাদের নিজেদের মধ্যে গ্রুপিয়ের কারনে আমরা ছয় বছর ধরে ভুগছি। এটার একটি নিষ্পত্তি না হয়ে সেটা বাতিল হয়ে গেলো। এখন আমাদের কি হবে।

চৌগাছা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) গোলাম কিবরিয়া জানান,উপজেলার ৬১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২০টিতে ওই পদে নিয়োগ আছে। বাকি ৪১টিতে কোনো জনবল নেই। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আমার তেমন কিছু জানানেই বলেই জানান তিনি।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঝুলে থাকা দপ্তরী নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছে।

আগস্ট ২২, ২০১৯ at ১৮:০৩:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/এম/আজা