বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র ‘হাওয়া ভবনে’ গ্রেনেড হামলার পরিকলপনার ছক

একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ছক করা হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র ‘হাওয়া ভবনে’। এই ভবনটি ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের দপ্তর। তারেক রহমানই ওই নৃশংস গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড। হামলার পেছনে বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রত্যক্ষ ইন্ধন ও চক্রান্ত ছিল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাওয়া ভবনসহ ১০টি স্থানে বৈঠক করা হয়। গ্রেনেড হামলার টার্গেট ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব বিষয় উঠে আসে।

মূল ঘটনার আগে বিভিন্ন স্থানে ও তারেক রহমানের অফিস হিসেবে পরিচিত বনানীর হাওয়া ভবনে এ মামলার আসামিরা অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সভা করে। পরিকল্পিতভাবে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে ওইদিন মারাত্মক সমরাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা এবং শতাধিক নেতাকর্মীকে মারাত্মকভাবে জখম করে।

আরও পড়ুন :
শাপলা পরিবহন থেকে শতাধিক বোতল ফেনসিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক
রোপা আমন ধান চাষে ব্যস্ত কৃষক

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণায় আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসা তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পৃথক দুটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। ওই হাওয়া ভবন বিএনপি-জামায়াত ঐক্যজোট সরকারের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কিনা। ওই ঘটনাস্থলে পলাতক আসামি তারেক রহমান অপরাধ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্রমূলক সভা করেছে কি ? ও জঙ্গি নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মিটিং করে কিনা।

এই হাওয়া ভবনে তারেক রহমান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। হামলার আগে পিন্টুর বাসভবনে দফায় দফায় হামলার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক হয়। হামলার ব্যাপারে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক, বাবর ও পিন্টু।

গ্রেনেড হামলার দায়ে বাবর ও পিন্টুকে ফাঁসি এবং তারেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে আদালত মন্তব্য করেছেন, বিরোধীদলীয় নেতাদের হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটা গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়। আদালত এ দেশে আর এমন নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না।

আবু তাহের মুফতি হান্নানকে বলেন, আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরে হান্নান ও আহসান উল্লাহ কাজল পিন্টুর সরকারি বাসভবনে যান। আবদুস সালাম পিন্টু তখন তাদের উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তা আবু তাহেরের মাধ্যমে করা হবে। তাহেরের আদেশ অনুযায়ী হামলাকারীদের কাছে ১৫টি গ্রেনেড বুঝিয়ে দেন হান্নান।

দেশ দর্পণে আরও পড়ুন :
ছেলেধরা গুজবে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে গণপিটুনি
চাকুরী বাঁচাতে হাসপাতালেই ধর্ষিতাকে বিয়ে করলেন পুলিশ সদস্য
“ইজতেমা” ঠেকাতে জুবায়ের পন্থিদের মানববন্ধন

মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরের সাংসদ শাহ মোফাজ্জাল হোসেন কায়কোবাদ তাকে এবং অন্যদের হাওয়া ভবনে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। হামলার কাজকর্মের জন্য সহযোগিতা চাইলে তারেক রহমান অন্য আসামিদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভা আয়োজনের সংবাদ জানার পর শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মুফতি হান্নান, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন জঙ্গি সংগঠন আল মারকাজুলের গাড়িতে করে মাওলানা রশীদসহ অন্যরা হাওয়া ভবনে যান। সেখানে হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তারেক রহমান সেখানে আসেন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সহায়তা চাওয়া হয়।

আদালতের রায়ে এই মামলায় ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে ওঠে আসা বিএনপি নেতা তারেক রহমানের ফাঁসির আদেশ না হওয়ায় পুরোপুরি খুশি হতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতের রায়ের পর সাংবাদিকদের কাছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আক্ষেপ করে বলেন, এ হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে তারেক রহমানের বিষয়টি আদালতে সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা মনে করি, তারেক রহমানের ফাঁসি ছাড়া এই দণ্ড পূর্ণাঙ্গ হয় না।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত এই মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের ফাঁসি এবং তারেক রহমান, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। বাকি ১১ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

আগস্ট ২১, ২০১৯ at ১২:১৬:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/এএল/আজা