জাল-জালিয়াতি করে অবৈধ অর্থ বানিজ্যের মাধমে শিক্ষক নিয়োগসহ বহুবিধ অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

জাল-জালিয়াতি করে অবৈধ অর্থ বানিজ্যের মাধমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ৭ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এছাড়া অভিযোগ, সরকারী নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে রশিদ বাদেই শ্রেণি শিক্ষকদের দিয়ে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়সহ বহুবিধ কর্মকান্ড করছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান। এ সকল কর্মকান্ডে ফুঁসে উঠেছে অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

সূত্র জানায়, স্কুলটির শিক্ষক প্যাটার্নে যে ক’জন শিক্ষক কর্মচারী থাকার কথা তাছাড়াও এই সাত সহকারী শিক্ষককে অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে পত্রিকার ভূয়া বিজ্ঞাপন তৈরি করে ও জাল জালিয়াতি মাধ্যমে সকল কাগজপত্র দাখিল করে তাদের মাসিক পে-অর্ডার (এমপিও ভুক্ত) করে এনেছেন। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য, শিক্ষার্থীদের বেতনসহ বিভিন্ন খাত থেকে আসা প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ উঠেছে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেলে ১ আগষ্ট ম্যানেজিং কমিটির এক জরুরী সভা করে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে স্কুলের আয়-ব্যয়ের সকল হিসাব সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির ওই সভায় স্কুলের পাঁচ শিক্ষকের একটি অর্থ কমিটি করে আয়-ব্যয়ের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়।

সম্প্রতি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক যশোরের একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদন্নতি নিয়ে চলে যান। এরপর প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। কিন্তু স্কুলে প্যার্টান বহির্ভূত অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ থাকায় স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। এ ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের জাল-জালিয়তির ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০৯ সালে যোগদান করেন। এরপর ২০১১ সাল থেকে রশিদ বাদেই শ্রেণি শিক্ষকদের দিয়ে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করেন। এসব টাকা নিয়ম-নীতি ছাড়াই নিজের ইচ্ছা মতো খরচ করতে থাকেন। যার কোন বৈধ ভাউচার বা ক্যাশ কলামনারে উল্লেখ নেই। স্কুলে পুকুর, মার্কেট ও জমি লীজের টাকার কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল বাদেই নিজের ইচ্ছা মতো খরচ করতে থাকেন। এসব ঘটনা নিয়ে সাধারন শিক্ষক কর্মচারী ও অভিভাবকরা ফুসে উঠে। এসব ঘটনা আড়াল করতে নিয়ে স্কুলের ক্যাশ কলামনার বহি বাড়িতে এনে রেখেছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:
দেশ ধ্বংসে ড. কামাল-মান্নারা সমান অপরাধী : মোমিন মেহেদী

অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়টিতে ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারী পদ থাকলেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল-জালিয়াতির ও অর্থ বানিজ্যের মাধ্যমে অতিরিক্ত সাতজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির একটি করে মোট দু’টি শাখা অনুমোদন রয়েছে। বাকি তিন শ্রেণিতে শাখার অনুমোদন না থাকলেও প্রধান শিক্ষক ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দেন। এসব শিক্ষক নিয়োগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয় অভিযুক্ত এই প্রধান শিক্ষক। এসব নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার সময় প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান স্থানীয় সংসদ সদস্যর নাম ভাঙ্গিয়ে এসব টাকা নিয়োগ প্রার্থী শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন। পরবর্তিতে বেতন করার জন্য এসব শিক্ষকদের কাছ থেকে পুনরায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন। ইতিমধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে এসব শিক্ষদের এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এমন জাল-জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান গোপনে শাখা খোলার কার্যক্রম শুরু করেন। ইতিমধ্যে তিনি স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও যশোর বোর্ডের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে শাখা খোলার কাগজপত্র শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছেন।

আরো পড়ুন:
রাজগঞ্জে পোল্ট্রি ফার্মের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে মৃত্যু
ভারতে পাচার হওয়া ৮ নারীকে বেনাপোল দিয়ে বিজিবি কাছে হস্তান্তর

এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানে একজন আয়া দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে কাজ করাচ্ছেন। কথা ছিল তাকে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ দিবেন। কিন্তু সম্প্রতি তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অডিট হয়। সে সময় অডিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে ননএমপিও চারজন শিক্ষকের নিকট থেকে পঁচিশ হাজার করে একলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান।

রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, রাজনৈতিক জটিলতার কারণে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। অবৈধ নিয়োগ ও শ্রেণি শাখা খোলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রনালয় পর্যায়ক্রমে শাখার অনুমোদন দেয়। তবে, শিক্ষক আগেই নিয়োগ দিয়ে এমপিও ভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মধু সূদন সাহা বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধের ব্যাপারে জানতে চাইলে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভালো বলতে পারবেন। এছাড়া প্যাটার্ন বহির্ভূত সাত শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিও ভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, তিনি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছেন। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম, পরে খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি তিনি দেখবেন।

আগস্ট ২০, ২০১৯ at ২১:২৬:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এএসএমএসএস/তআ